চেয়ার-টেবিল না জুটলেও ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেলেন স্মৃতি
বাবা কাজ করেন অন্যের বাড়িতে, তাই কোনো রকম দু’বেলা খাবার জোগাতেই হিমসিম অবস্থা। এত অবহেলার পরও মেয়ে যখন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে তখন আনন্দে আত্মহারা বাবা। কিন্তু কলেজে ভর্তি আর পড়ালেখার খরচের চিন্তায় এখন হতাশা ভর করেছে হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া জয়পুরহাটের হরিপুর গ্রামের স্মৃতি পারভিনের পরিবারে।
চেয়ার-টেবিলে বসে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি গ্রামের মেধাবী ছাত্রী স্মৃতি পারভিনের। শোয়ার ঘরে খাটে বসেই করতে হয়েছে পড়ালেখা। তবে শিক্ষা জীবনের কোনো সমস্যার কথা তুলে ধরেননি দিনমজুর বাবার কাছে। অর্থাভাবে রাজশাহীতে গিয়ে কোচিং করার সামর্থ্য না থাকায় শুধু অনলাইনে কোচিং করেই ছিনিয়ে এনেছেন ছাত্র জীবনের সেরা সাফল্য। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ৭৩.৫ নম্বর পেয়ে হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা হরিপুর গ্রামের আলাউদ্দিন ও শাহানাজ পারভিন দম্পতির দুই মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান স্মৃতি পারভিন। স্মৃতির বাবা দিনমজুর আর মা গৃহিণী। স্মৃতি হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি ও জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্মৃতির বাবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বসতভিটা ছাড়া তার ১৩ শতক আবাদি জমি রয়েছে। ওই জমিতে যে ফসল আবাদ হয় তা দিয়ে আর দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চলে।
ইতোমধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে জয়পুরহাট সরকারি কলেজে যাওয়া শুরু করতেই আলাউদ্দিনের কষ্ট বেড়ে যায়। প্রতিদিন মেয়েকে কলেজে যাতায়াত খরচ বাবদ ২৫-৩০ টাকা করে দিতেন। এ টাকা দিয়েই কষ্ট করে স্মৃতি কলেজে পড়াশোনা করেছেন। এর মধ্যে একটি বেসরকারি এনজিও থেকে শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে ২৪ হাজার টাকা পাওয়ায় কষ্ট কিছুটা কমে আসে।

স্মৃতি পারভিন বলেন, আমার টেবিলে বসে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। শোয়ার ঘরের খাটে বসেই আমি পড়াশোনা করেছি। আর এভাবেই সবধরনের পড়াশোনা করতে হয়েছে।
স্মৃতি আরও বলেন, শিক্ষা জীবনে কোনো সমস্যার কথায় আমি তুলে ধরিনি বাবা-মার কাছে। আমি বাসায় বসে শুধু অনলাইনে কোচিং করেই ভর্তির সুযোগ পেয়েছি হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে। জানি না সেই মেডিকেলে ভর্তি হতে পারবো কি না? বাবা-মা আমাকে পড়াশোনা করাতে পারবেন কি না সেটি নিয়ে শঙ্কায় আছি।
স্মৃতির বাবা বলেন, আমার নিজের জমি না থাকায় অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করি। সেই টাকা দিয়ে আমি সংসার চালাই পাশাপাশি মেয়েকে পড়াশোনা করাতাম। মেয়ের ডাক্তারি পড়ার সুযোগে খুশি হলেও বিচলিত পড়ালেখার খরচ নিয়ে।
মেয়েকে ডাক্তার বানানোর জন্য বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন স্মৃতির বাবা-মা।
স্মৃতির স্কুলশিক্ষক শাহআলম ও প্রতিবেশী কয়েকজন বলেন, স্মৃতির অদম্য মেধার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, মেয়েটি আমাদের এলাকার গর্ব। অর্থের অভাবে এমন মেধা যেন ঝরে না পড়ে সেজন্য তাকে সহযোগিতা করা দরকার।
ভাদসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বাধীন বলেন, স্মৃতির পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিত্তবান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা উচিৎ।
রাশেদুজ্জামান/এফএ/জেআইএম