চিকিৎসক রুবেলের সুখের সংসারে আঁধার আনে ‘ঋণের বোঝা’
ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন ২০ বছর আগে। সুখের সংসারে ছিল দুই মেয়ে। সব নিয়ে ভালোই চলছিল। কিন্তু বাধ সাধে ঋণ। শুরু হয় হতাশা। নিজে আত্মহত্যা করলে স্ত্রী সন্তানদের ঋণের বোঝা বইতে হবে। এজন্য তাদেরকে নিয়েই পৃথিবী থেকে চলে যেতে চেয়েছিলেন দন্ত চিকিৎসক আসাদুজ্জামান রুবেল (৪০)। তবে স্ত্রীসহ দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টাকালে তাকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশের কাছে আটকের পর হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে এমন কথাই বলেছেন আসাদুজ্জামান রুবেল।

আসাদুজ্জামান রুবেল ঘিওর উপজেলার আঙ্গুরপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে। তিনি উপজেলার বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে দন্ত চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিলেন।
রোববার (৮ মে) সকালে ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের আঙ্গুরপাড়া গ্রামের একটি ঘর থেকে রুবেলের স্ত্রী ও দুই মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ।
নিহতরা হলেন আসাদুজ্জামান রুবেলের স্ত্রী লাভলী আক্তার (৩৫), বড় মেয়ে বানিয়াজুরী সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছোঁয়া আক্তার (১৬) ও ছোট মেয়ে বানিয়াজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী কথা আক্তার (১২)।
রুবেলের প্রতিবেশী সোহেল হোসেন জানান, ২০ বছর আগে রুবেল ও লাভলী ভালোবেসে ঘর বাঁধেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা সুখে শান্তিতে সংসার করে আসছিলেন। ১৫ বছর ধরে রুবেল আঙ্গুরপাড়ায় একই গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া জমিতে একটি ছাপড়া ঘরে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ বাড়তে থাকে। শনিবার রাতে তাদের মাঝে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।

লাভলীর ভাতিজা সাইফুল ইসলাম জানান, রুবেল বানিয়াজুরী বাজারে দন্ত চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন। সম্প্রতি একটি ভুল চিকিৎসায় তাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই জরিমানার টাকা আজ রোববার দেওয়ার কথা ছিল। এ নিয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। স্ত্রী ও দুই কন্যাকে হত্যা করে তিনি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাটুরিয়া এলাকায় বাসের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছিলেন। তাকে আহত অবস্থায় পাটুরিয়া থেকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
লাবনী আক্তারের মা হালিমা বেগম বলেন, সকালে প্রাতভ্রমণ শেষে মেয়ের বাড়িতে যাই। এ সময় ডাকাডাকি করেও কারও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। পরে ঘরের বাইরের শিকল খুলে দেখি রক্ত। খাটে শুয়ে আছে মেয়ে লাবলী ও দুই নাতনি। তাদের ডাক দিলেও কোনো সাড়া না দেওয়ায় ধাক্কা দিয়ে দেখি তাদের গলা কাটা।

স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান বলেন, রুবেল অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। যার দরুন এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন।
শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরজাহান লাবনী বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখতে পাওয়া যায় একটি ঘরে মা ও দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। যে দা দিয়ে গলা কাটা হয়েছে সেটিও ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুদ্দিন আহমেদ বিপ্লব জানান, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত রুবেল। প্রথমে তার স্ত্রী ও পরে দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিজে আত্মহত্যা করলে স্ত্রী সন্তানদের ঋণের বোঝা বইতে হবে। এজন্য তাদের নিয়েই পৃথিবী থেকে চলে যাবেন। এই ভাবনা থেকেই হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি।
এ ঘটনায় নিহত লাবলী আক্তারের বাবা মো. শাহাজুদ্দিন বাদী হয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিএম খোরশেদ/এফএ/জিকেএস