সরকারের কাছে একটি ঘর চান মনোয়ারা
জরাজীর্ণ একট ঘরে বাস করেন ৭০ বছর বয়সী মনোয়ারা বেগম ওরফে বানেছা বেগম। একটু দমকা বাতাসে যে কোনো সময় উড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। বৃষ্টি এলেই পানি পড়ে। তখন আশ্রয় নেন নাতির ঘরে। থাকার জন্য সরকারের কাছে একটি ঘর বৃদ্ধা মনোয়ারা।
মনোয়ারা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়াগাঁও গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিন ওরফে বাসু মিয়ার স্ত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬৬ সালে হাফিজ উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় মনোয়ারার। বিয়ের আট বছর পর কলেরায় আক্রান্ত হয়ে স্বামী হাফিজ মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন মনোয়ারা। দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। অভাবের সংসার চালাতে গিয়ে কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করেছেন, আবার কখনো বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বিভিন্ন পণ্য (সাবান, তেল, বিস্কুট, চানাচুর) বিক্রি করেছেন। পরে মেয়ে বড় হওয়ায় বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরও বিয়ে হয়েছে।

সন্তানের আর্থিক অবস্থা ভালো না। তাই জীবিকার তাগিদে অন্যের বাড়িতে কাজ নেন। কাজ করতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পান মনোয়ারা। টাকা-পয়সা না থাকায় চিকিৎসার অভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেন তিনি। সংসারে একের পর এক পরিবারের সদস্য বেড়ে যায়। পরিবারের চাহিদা ও বাসস্থান পর্যাপ্ত না হওয়ায় তার স্বামীর বসতভিটা বিক্রি করে দেন ছেলে মহির উদ্দিন।
মনোয়ারা বর্তমানে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের সীমানাঘেঁষা ধানশাইল ইউনিয়নের দাড়িয়ারপাড় এলাকার কাহিলাকুড়া বিলের পাষে গড়ে তুলেছেন বসতভিটা। ওই ভিটায় দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি দোচালা টিনের ঘরের এক কক্ষে ছেলে ও ছেলের স্ত্রী, অপর কক্ষে থাকেন নাতি। মনোয়ারা থাকেন ছনের তৈরি একটি ঘরে। তার মাথা গোঁজার একমাত্র ঘরটি বসবাসের অযাগ্য হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি এলেই পানি পড়ে।
মনোয়ারা বেগম জাগো নিউজকে জানান, দিনমজুর ছেলে খুব কষ্ট করে সংসার চালান। প্রায় সময় মানুষের সহযোগিতা নিয়ে চলতে হয় তাকে। বয়স্ক, বিধবা বা প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডও নেই। এর মধ্যে আবার বসতঘরটিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। টাকার জন্য ঘরটি ঠিকও করতে পারছেন না। বৃষ্টি হলে নাতির ঘরে গিয়ে তাকে আশ্রয় নিতে হয়।
সরকারের কাছে নতুন করে একটি ঘরের দাবি জানিয়ে মনোয়ারা বলেন, ‘একটি ঘর পেলে আমার থাকার কষ্ট দূর হবে। আমি একটি ঘর ভিক্ষা চাই।’

মনোয়ারার ছেলে মহির উদ্দিন বলেন, ‘পা ভেঙে আমার মা প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছেন। হাতে টাকা-পয়সা নেই। এজন্য ঘর মেরামত করতে পারছি না। বৃষ্টি হলে আমার ছেলের ঘরে রাত কাটাতে হয় মাকে। আমার যে অবস্থা, তাতে খুব কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। সরকারের সহযোগিতায় একটি বসতঘর পেলে অনেক উপকার হবে। আমার মায়ের জন্য সরকারের কাছে একটি ঘর চাই।’
স্থানীয় শিক্ষক হানিফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মনোয়ারা দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ ঘরে থাকছেন। তার ছেলের আর্থিক অবস্থাও ভালো না। সরকারিভাবে যদি একটি ঘর করে দেওয়া হয়, তাহলে ওই বিধবা নারী নিয়ে একটু শান্তিতে থাকতে পারবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, ‘সরকার এমন অসহায় লোকই খোঁজছে। তবে তার বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না। দ্রুত সময়ের মধ্যে খোঁজ নিয়ে তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইমরান হাসান রাব্বী/এসআর/এএসএম