সৌদি আরবে গিয়ে লাশ হলেন ছেলে, বিচার চেয়ে কাঁদছেন বাবা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নড়াইল
প্রকাশিত: ১১:৪৭ এএম, ১৪ জুন ২০২২

পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে সৌদি আরবে কাজের সন্ধানে যান নজিবুল্লাহ (২২)। কিন্তু আড়াই মাসের মাথায় মৃত্যু জোটে তার ভাগ্যে। নজিবুল্লাহকে বিদেশে পাঠাতে তিন দফায় দালাল চক্রের হাতে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিয়েও রক্ষা হয়নি তার। সন্তান ও সম্পদ হারিয়ে এখন নিঃস্ব নজিবুল্লাহর বাবা।

এ ঘটনায় রোববার (১২ জুন) এক নারীসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে নড়াইল সদর আমলি আদালতে ১২ জুন অভিযোগ দায়ের করেছেন নজিবুল্লাহর বাবা কেরামত শেখ। বিষয়টি নিয়ে শুনানি শেষে এজাহার আকারে লিপিবদ্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার মিরাপাড়া গ্রামের জলিল মিনার ছেলে শাহাবুদ্দিন মিনা কেরামত শেখের স্ত্রীর ফুফাতো ভাই হওয়ার সুবাদে ছেলে নজিবুল্লাহকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠানোর মৌখিক চুক্তি করেন বাবা। শাহাবুদ্দিন মিনার ভগ্নিপতি নড়াইল সদর উপজেলার চাঁচড়া গ্রামের সাইফুল আব্দার সৌদি আরবে কর্মরত।

কেরামত শেখ ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাইফুল আব্দারের স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও শ্যালক (রাবেয়ার চাচাতো ভাই) আমিনুর মিনার কাছে প্রথম দফায় ৩ লাখ টাকা দেন। গত ১ মার্চ রাবেয়া ও আমিনুরের কাছে আরো ৩ লাখ টাকা প্রদান দেন কেরামত শেখ। মোট ৬ লাখ টাকা দেওয়ার পর ১৭ মার্চ সৌদি আরবে পৌঁছান নজিবুল্লাহ।

পরবর্তীতে নজিবুল্লাহর কাগজপত্র ঠিক করে দেওয়ার কথা বলে এবং সৌদি পুলিশের ভয় দেখিয়ে কেরামত শেখের কাছে আরো দেড়লাখ টাকা দাবি করেন শাহাবুদ্দিন মিনা। গরু বিক্রি ও ধারদেনা করে দাবিকৃত দেড়লাখ টাকাও দেন কেরামত শেখ।

কিন্তু ৪ জুন কেরামত শেখ সৌদি আরবে অবস্থানরত অন্য লোকের মাধ্যমে জানতে পারেন তার ছেলে নজিবুল্লাহকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করেছে এবং ছেলের মৃতদেহ সৌদি আরবের হাসপাতাল মর্গে পড়ে আছে।

নজিবুল্লাহর বাবা কেরামত শেখ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে সব সম্বল বিক্রি করে ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলাম সুখে শান্তিতে বসবাস করবো বলে। কিন্তু শাহাবুদ্দিন মিনা ও তার বোন রাবেয়া ভগ্নিপতি সাইফুল আব্দারের খপ্পরে পড়ে আমার সব শেষ। আমি এর বিচার চাই।
শাহাবুদ্দিন মিনা ও রাবেয়ার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা বলেন, নজিবুল্লাহকে বিদেশ পাঠাতে আমরা সহযোগিতা করেছি এবং সে সৌদি আরবে পৌঁছেছে। পরবর্তীতে কী হয়েছে আমরা জানি না।

সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সজিব মোল্যা জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমরা অন্যভাবে জানতে পেরেছি। তবে কেরামত শেখ আমাদের কাছে বা পরিষদে এখানো কোনো অভিযোগ দেননি।

নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শওকত কবির বলেন, থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি, শুনেছি আদালতে মামলা করেছে। আমাদের কাছে তদন্তভার এলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

হাফিজুল নিলু/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।