গৃহবধূকে নির্যাতনের পর ঘরে আটকে রাখলেন স্বামী-শ্বশুর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ২১ জুন ২০২২
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতিত গৃহবধূ

যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে দু’দফা নির্যাতনের পর ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন তার স্বামী-শ্বশুর। বিষয়টি জানতে পেরে গৃহবধূর বাবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে তাকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

মঙ্গলবার (২১ জুন) বিকেল ৪টার দিকে বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামের মানিক গাজীর ছেলে নান্নু গাজী ২০১৭ সালে ৫ জানুয়ারি বিয়ে হবে। বিয়ের সময় গৃহবধূর বাবা মিলন তালুকদার মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ১ ভরি স্বর্ণের কানের দুল, গলার চেইন ও জামাই নান্নু গাজীকে গলার চেইনসহ সংসার সাজানোর জন্য প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল কিনে দেন। নান্নু গাজী স্ত্রীর বাবাবাড়ি থেকে ব্যবসার জন্য প্রায়ই টাকা এনে দিতে বলতেন। গৃহবধূও সাধ্যমত বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতেন। স্বামীর চাহিদা মতো টাকা এনে না দিলেই স্ত্রীর ওপর চলত নির্যাতন।

শনিবার সকালে নান্নু গাজী গৃহবধূকে তার বাবাবাড়ি থেকে ৩ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। গৃহবধূ আনবেন না জানালে নান্নু গাজী লাঠি দিয়ে বেধম পিটিয়ে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। মারধরে সহায়তা করেন নান্নুর বাবা মানিক গাজী, ভাসুর শাহীন গাজী ও মোখলেছ গাজী। এ নিয়ে মঙ্গলবার সকালেও স্বামী নান্নু গাজী, শ্বশুর মানিক গাজী, ভাসুর শাহীন গাজী ও মোখলেছ গাজী লাঠি দিয়ে দ্বিতীয় দফায় গৃহবধূকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখমের পর ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন।

ঘটনা জানতে পেরে গৃহবধূর বাবা দুপুরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দেন। খবর পেয়ে আমতলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমাম হোসেন নান্নু গাজীর ঘর থেকে গৃহবধূকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

এসআই ইমাম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গৃহবধূ বাবা অভিযোগ করে বলেন, ‘যৌতুকের জন্য নান্নু গাজী, তার বাবা মানিক গাজী, ভাসুর শাহীন গাজী ও মোখলেছ গাজী প্রায়ই আমার মেয়েকে মারধর করতো। তারা আমার মেয়ের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় গত শনিবার এবং মঙ্গলবার গাছের ডাল দিয়ে দু’দফা পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। ভয়ে আমি ওই বাড়িতে মেয়েকে উদ্ধারের জন্য যাইনি। তাই ৯৯৯-এ ফোন দিয়েছি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

অভিযুক্ত স্বামী নান্নু গাজী বলেন, যৌতুকের জন্য নয় পারিবারিক কলহের জন্য মারধর করেছি। চিকিৎসা না করিয়ে বাড়িতে আটকে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

অভিযুক্ত নান্নু গাজীর বাবা মানিক গাজী বলেন, ছেলের বউ কথা শোনে না তাই মারধর করেছি। ছেলের বউকে মারতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি জাগো নিউজকে বলেন, যৌতুক দাবি বা নির্যাতনের বিষয়ে এর আগে কোনো অভিযোগ আসেনি। যেহেতু পুলিশ অই গৃহবধূকে উদ্ধার করেছে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা তারা নেবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে পুলিশের কাজে সহযোগিতা করবো।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে গুলিশাখালী গ্রামে পুলিশ পাঠিয়ে নির্যাতিত গৃহবধূকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।