হবিগঞ্জ শিল্পাঞ্চল

গ্যাসের অভাবে বন্ধের পথে কারখানার উৎপাদন

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন হবিগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ২২ আগস্ট ২০২২

গেলো কয়েকদিন ধরেই হবিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের চাপ একেবারে কমে গেছে। দেশের রফতানিমুখী স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন কারখানায় বন্ধ হয়ে পড়েছে উৎপাদন। যেগুলোতে উৎপাদন চলছে সেগুলোও বন্ধ হওয়ার উপক্রম প্রায়। ফলে রফতানিমুখী গার্মেন্টস পণ্যের অর্ডার বাতিল হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ আছে বিভিন্ন কারখানায়। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা অনেকটা অলস সময় কাটান। মালিকপক্ষ তাদেরকে না পারছেন ছাঁটাই করতে না পারছেন কাজে লাগাতে। বসিয়ে রেখেই তাদের বেতন দিতে হচ্ছে।

স্কয়ার ডেনিম এবং স্পিনিংয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল বাবুল জানান, তাদের উভয় কোম্পানিতে কেপটিভে (বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট) ঘণ্টায় ২৪৯১ কিউবেক করে গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু দু’দিন ধরে স্পিনিংয়ে কোনো গ্যাস পাচ্ছেন না। আর ডেনিমে পাচ্ছেন ১৪৯৫ কিউবেক। আবার ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইনে স্পিনিংয়ে ১৬৩৫ এবং ডেনিমে ২২৫৮ কিউবেক প্রয়োজন। কিন্তু এতে কোনো গ্যাস পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় স্পিনিং কারখানাটি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। আবার ডাইং এবং ফিনিসিংও বন্ধ রয়েছে।

এ অবস্থায় আর দু’দিন গেলে সবগুলোই বন্ধ হয়ে পড়তে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, স্কয়ার এখানে সম্পূর্ণ রফতানিমুখী পণ্য উৎপাদন করে। গুণগত মানও সর্বোচ্চ রাখা হয়। এভাবে চলতে থাকলে অর্ডার বাতিল হতে পারে। ক্রেতাদের আস্থা কমে যেতে পারে। এই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়লে বৈদেশিক আয়েও বড় ধাক্কা লাগার আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।

স্টার ফোরসেলিনের প্রোডাকশন ম্যানেজার শাহাদাত মিঠু বলেন, আমাদের কারখানা অনেক ছোট। কিন্তু এরপরও এখানে মাঝে মাঝেই গ্যাসের সমস্যায় ভুগতে হয়। এতে উৎপাদনে যেমন ব্যাঘাত ঘটে তেমনি যন্ত্রপাতিও বিকল হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। তিনি অবিলম্বে শিল্পাঞ্চলে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান। অন্যথায় বৈদেশিক আয় মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।

গ্যাসের অভাবে বন্ধের পথে কারখানার উৎপাদন

জালালাবাদ গ্যাস টি অ্যান্ড ডি সিস্টেম লিমিটেডের মহা-ব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা, অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী খান মো. জাকির হোসাইন জানান, জাতীয় গ্রিড থেকেই বরাদ্দ কমে গেছে। তাছাড়া লাইনের ধারণক্ষমতাও কম। উৎপাদনও কমে গেছে। এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় ৩শ’ থেকে ৪শ’ এমএমসিএফটি গ্যাস সরবরাহ কম হচ্ছে। এগুলো এখন বিভিন্ন স্থানে কিছু কম দিয়ে কাভার করা হচ্ছে। আগে প্রথমে দেওয়া হতো ৪২৫ এমএমসিএফটি। এরপর ৩৯১ এমএমসিএফটিতে নামিয়ে আনা হয়। এরপর ৩৮৭ এমএমসিএফটি এবং বর্তমানে দেয়া হচ্ছে ৩৭৫ এমএমসিএফটি।

তিনি বলেন, এলএনজি আমদানি করতে পারলে আশা করা যায় এটি সমাধান করা সম্ভব হবে।

গ্যাসের অভাবে বন্ধের পথে কারখানার উৎপাদন

জানা গেছে, জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, হবিগঞ্জ সদর এবং শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মাধবপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে। গ্যাস এবং বিদ্যুতের সহজলভ্যতার কারণে এসব এলাকায় ২০১০ সালের পর থেকে দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই রফতানিমুখী। সম্প্রতি এসব এলাকায় গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে।

কিন্তু শিল্পাঞ্চলে চাহিদার অনেক কম গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানেরই কারখানা কোনো রকমে চলছে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের একাধিক ইউনিট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যন্ত্রপাতিও বিকল হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

গ্যাসের অভাবে বন্ধের পথে কারখানার উৎপাদন

এতে রফতানি আয়ও মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের দাবি এ অবস্থা চলতে থাকলে বিদেশি ক্রেতারাও এক সময় মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।