গ্রেনেড হামলা

নিহত কুদ্দুছের পরিবারের খবর রাখে না কেউ

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৬:৪৪ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২২
নিহত কুদ্দুছ এবং নাতনি ও দুই ছেলের সঙ্গে স্ত্রী পারভীন বেগম

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বের করা মিছিলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান যুবলীগ কর্মী কুদ্দুছ মিয়া। ঘটনার ১৮ বছর অতিবাহিত হলেও তার পরিবারের খবর এখন রাখে না কেউ। বড় ছেলের উপার্জনে কোনোরকম চলছে তাদের সংসার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর সামনে সমাবেশ চলাকালে নিজ নেতাকর্মীদের নিয়ে রাস্তায় বসেছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ শেষে মঞ্চ থেকে নামার সময় হঠাৎ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। গ্রেনেডে আঘাতে তাৎক্ষণিক গুরুতর আহত হন আইভি। ২৪ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তিনিসহ মোট ২৪ জন হামলার ঘটনায় নিহত হন। আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী-সমর্থক।

এদিকে ২১ আগস্ট রাতে আইভির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন ২২ আগস্ট বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে প্রাণ হারান যুবলীগ কর্মী কুদ্দুছ মিয়া।

সোমবার পৌর শহরের ভৈরবপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকায় নিহত কুদ্দুছের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, দুই কক্ষবিশিষ্ট পুরোনো একটি আধাপাকা বাড়ি। দুই কক্ষে দুই সন্তান সোহান (২১) ও সৌরভকে (১৯) নিয়ে বাস করেন কুদ্দুছের স্ত্রী পারভীন বেগম। দুই মেয়ে দিশা ও দিপার বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি থাকেন। ছোট ছেলে সৌরভ এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আর পড়াশুনা করেননি। বড় ছেলে সোহান স্থানীয় একটি মোটরসাইকেল শোরুমে কাজ করেন। তার উপার্জনেই কোনোরকম চলছে পরিবার।



নিহত কুদ্দুছের স্ত্রী পারভীন বেগম বলেন, ‘আইভি রহমানের মৃত্যুর খবরে ভৈরবে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলে আমার স্বামী অংশ নিয়েছিলেন। সে সময় পুলিশের রাবার বুলেটে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। নিহতের পর থেকে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে দিনযাপন করেছি। তার মৃত্যুর প্রথম দিকে স্থানীয় নেতারা খোঁজ নিতেন। তবে এখন আর কেউ খোঁজ রাখে না। তিনবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও আমরা কোনো সহযোগিতা পাইনি।’

কুদ্দুছের ছোট ছেলে সৌরভ বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পর মা খুব কষ্ট করে আমাদের বড় করেছেন। আমার নানা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তার পেনশনের টাকার কিছু অংশ নানি মাকে দিতেন। সেই টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলতো। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ছুটা কাজ করে আমাদের বড় করেছেন।’

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সাবেক এপিএস ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ- সভাপতি মোল্লা সাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘটনার পর কয়েক বছর তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা হয়েছে। খোঁজ-খবরও নেওয়া হতো দল থেকে। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবত তার পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না। এ কারণে তাদের কথা অনেকেই ভুলে গেছে। এখন যখন মনে করেছেন আমি সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপনকে বিষয়টি নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেবো। তাদের সহযোগিতার বিষয়ে আলাপ করবো।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সায়দুল্লাহ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, কুদ্দুছের পরিবারকে আগে সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে গত কয়েক বছর যাবত তাদের কথা ভুলে গেছে সবাই। কারণ পরিবারের কেউ এখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না। তার নতুন করে যোগাযোগ করলে আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবো।

এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।