বিলুপ্তির পথে ‘গরিবের এসি’ ছনের ঘর

নাসিম উদ্দিন নাসিম উদ্দিন , জেলা প্রতিনিধি, জামালপুর
প্রকাশিত: ০৪:৩৭ পিএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

একসময় জামালপুরের গ্রামাঞ্চলে দেখা মিলতো ছনের ঘর বা কুঁড়েঘর। বাঁশ, চাটাই, ছন দিয়ে তৈরি করা হতো এ ঘর। এ ঘর গরমে যেমন ঠান্ডা তেমনি শীতকালে গরম। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে ‘গরিবের এসি’ হিসেবেও পরিচিত এটি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়।

জেলার গ্রামগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সব জায়গায়। প্রত্যন্ত গ্রামেও এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। কোথাও ছনের ঘরের অস্তিত্ব নেই। একসময় যেখানে দেখা মিলতো অসংখ্য ছনের ঘর, এখন সেখানেই গড়ে উঠেছে টিনের ঘর ও আধাপাকা দালান। আরামদায়ক এ ঘরে দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। মানুষের বসবাসের পাশাপাশি তৈরি করা হতো রান্নাঘর, গোয়ালঘর ও ঢেঁকিঘর। এখন এ ঘরের পরিবর্তে নির্মাণ করা হচ্ছে টিন বা ইটের তৈরি পাকা দালান।

jagonews24

আব্দুল খালেক মণ্ডল। বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই। একসময় ছনের ঘরের কারিগর ছিলেন তিনি। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারেন না। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘একসময় চরাঞ্চলে প্রচুর ছনের আবাদ হতো। এসব ছন কেটে বাঁশ, চাটাইয়ের মাধ্যমে খুবই কম খরচে তৈরি করা হতো এ ঘর। শুধু থাকার জায়গা নয়; রান্নাঘর, ঢেঁকিঘরেও ব্যবহার করা হতো ছন। কিন্তু বর্তমানে যেসব স্থানে ছনের আবাদ করা হতো এখন সেসব জায়গায় শস্য আবাদ করা হচ্ছে। কালের পরিক্রমায় এসব ঘর হারিয়ে গেছে।’

jagonews24

পরিবেশ আন্দোলনের (পবা) জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানুষের জীবনযাত্রার অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন গরিব মানুষের বাড়িতেও টিনের ঘর, আধাপাকা বিল্ডিং। ছনের ঘর এখন দেখাই যায় না।’

কথা হয় মেলান্দহ উপজেলার মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘরের ট্রাস্টি হিল্লোল সরকারের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছনের ঘর বা কুঁড়েঘর ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্য। এ ঘর শীতকালে যেমন ছিল গরম তেমনি গরমে ছিল ঠান্ডা। খুবই স্বল্প খরচে বাঁশ, ছন এবং পাটের সুতা দিয়ে এ ঘর বানানো যেতো। তবে শ্রমিক সংকট, ছনের স্বল্পতা এবং সর্বোপরি আধুনিকতার ছোঁয়ায় এ ঘর এখন বিলুপ্তপ্রায়। সারা জেলাতে ঘুরেও এ ঘরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। যদিও দু-একটি পাওয়া যায় তার অবস্থাও বেহাল।’

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।