‘ভর্তি হছি কাইলকে, আজ দুপুরেও আসেনি ডাক্তার’
‘হাসপাতালত ভর্তি হছি কাইলকে (হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি গতকাল)। আজ দুপুর হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ডাক্তার আসে নাই দেখপের (দেখতে)। শুধু একটা স্যালাইন দিছে। সে স্যালাইনটা বাহির থেকে কিনি আনছি। সরকারি হাসপাতালত আচ্ছি (সরকারি হাসপাতালে আছি) তাও ট্যাকা (টাকা) দিয়া ওষুধ কেনা নাগতিছে (লাগছে)। হামরা (আমরা) গরিব মানুষরা কেমনে চিকিৎসা করমো (করবো), বাবা?’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শারীরিক দুর্বলতাজনিত কারণে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়নের কাটিহারা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কুলসুম বেগম।
তবে এমন অভিযোগ শুধু কুলসুম বেগমের নয়, আঞ্জুয়ারা, মোশারফ হোসেন, ফরিদ মিয়া, লাইলী বেগমসহ আরও অনেকের। তাদের অভিযোগ, তারা হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা পান না।

রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জনবল সংকটে ধুঁকছে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল। নোংরা পরিবেশ। চিকিৎসকরাও ঠিকমতো রোগী দেখেন না। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ ওষুধই কিনতে হয় বাইরে থেকে।
সরেজমিন দেখা যায়, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও অবকাঠামো ১০০ জনের। রোগী ভর্তি আছেন ২৮০ জন। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের মেঝে, বারান্দা ও একই বেডে দুজন করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বোর্ড বাজারের আঞ্জুয়ারা। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিছানা না পেয়ে বারান্দায় শুয়ে আছি। মাথার ওপর ফ্যান নাই। গরমে থাকতে পারছি না। এমনিতেই পেট ব্যথা, তার ওপর নোংরা পরিবেশ। এই পরিবেশে মানুষ সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা, আরও অসুস্থ হবে।’

পা-ভাঙা রোগী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘পাও (পা) প্লাস্টার করতে ট্যাকা চায় এক হাজার। ৮০০ ট্যাকা দিবার চাচ্ছি (দেবো বলেছি)। তাও প্লাস্টার করি দেয় না। হামরা গরিব মানুষরা কেমনে চিকিৎসা করমো, বাহে (ভাই)?’
তুলশীঘাট থেকে চিকিৎসা নিতে আসা লাইলী বেগম (৫৫) জাগো নিউজকে বলেন, ‘ট্যাকা দিয়ে যদি ওষুধ নেওয়া নাগে, তাহলে সরকারি হাসপাতালে আসিয়া হামার কী হলো? ট্যাকা যদি থাকলোই (যদি টাকাই থাকতো) তাহলে কি হামরা ওষুধ নেওয়ার জন্যে হাঁটি হাঁটি (হেঁটে হেঁটে) হাসপাতালত আসলেম হয় (হাসপাতালে আসতে হয়)?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১০০ জনের অবকাঠামোতে ২৮০ জন রোগী ভর্তি থাকলে কীভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব বলে প্রশ্ন রাখেন গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শিহাব মো. রেজওয়ানুর রহমান।

তিনি বলেন, যেখানে একজন রোগীর সঙ্গে লোক আসার কথা একজন, সেখানে প্রতিদিনই ৪-৫ জন আসেন। এত লোকের সেবা দেওয়ার মতো জনবল হাসপাতালে নেই। তবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে রোগীর চাপ বেশি হলেও স্বাস্থ্যসেবায় ঘাটতি নেই বলে দাবি করেন তিনি।
এসআর/এএসএম