‘লাম্পি’ প্রাদুর্ভাবে দুশ্চিন্তায় নাটোরের খামারিরা

নাটোরের বাগাতিপাড়া ও লালপুর উপজেলায় গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজের (এলএসডি) প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এরই মধ্যে দুই উপজেলায় এ রোগে প্রায় চার হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে। এর নির্দিষ্ট টিকা বা প্রতিষেধক না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি ও গৃহস্থরা।
প্রাণি সম্পদ দপ্তরের পরামর্শ, আতঙ্কিত না হয়ে গরুর চিকিৎসা নেওয়া এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সঠিক নিয়মে চিকিৎসা করলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে উঠবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালপুর উপজেলার বিলমারিয়া, ওয়ালিয়া ও আড়বাব ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে লাম্পি রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়েছে। অপরদিকে বাগাতিপাড়া উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে।
খামারিরা জানান, গরুর প্রথমে জ্বর হচ্ছে এবং খাওয়ার রুচি কমে যাচ্ছে। এরপর গরুর সারা শরীরে গুটি দেখা দিচ্ছে। ৩-৪ দিনের মধ্যে সেগুলো ফেটে ঘায়ে পরিণত হচ্ছে। আবার কিছু কিছু গরুর আক্রান্ত স্থানে পানি জমছে। পরে সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে মাংসে পচন ধরছে।
বাগাতিপাড়া পৌরসভার মুরাদপুর গ্রামের জামাল হোসেন জানান, তার গ্রামে বেশিরভাগ গরুই এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার নিজের গরুও আক্রান্ত হওয়ায় পশু চিকিৎসককে বাড়িতে এনে চিকিৎসা করাচ্ছেন। এছাড়া পশু হাসপাতাল থেকে দেওয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। এরই মধ্যে একটি গরুর চিকিৎসাবাবদ তার প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, তবুও গরুটি সুস্থ হচ্ছে না।
একই এলাকার আব্দুস ছামাদ জানান, তার একটি বাছুর লাম্পি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে অনেকটা সুস্থ হয়েছে।
পাঁকা ইউনিয়নের রামপাড়া গ্রামের তৃষা জানান, আগে তার একটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়েছে। এবার আরেকটি গরু আক্রান্ত হওয়ায় উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন।
বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়নের স্বরূপপুর এলাকার গরুর খামারি মানিক হোসেন জানান, তার খামারের গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। এর প্রতিষেধক টিকাও না পাওয়ায় তিনিসহ তার মতো অন্য খামারিরা উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল হাদী জাগো নিউজকে বলেন, পশু চিকিৎসায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়ায় এলাকায় বিভিন্ন খামারসহ গৃহস্থের গরুর চিকিৎসা করি। হঠাৎ করেই কয়েক সপ্তাহ ধরে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ বেড়েছে। প্রায় প্রত্যেক গ্রামেই এ রোগে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা আমি করছি। এ পর্যন্ত এ উপজেলায় প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার গরু লাম্পি রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
বাগাতিপাড়া প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বেসরকারিভাবে গরুর খামারের সংখ্যা ৩৮টি। খামার ও গৃহস্থ পর্যায়ে এ উপজেলায় গরুর সংখ্যা বর্তমানে ১ লাখ ৫২ হাজার ২৭০টি।
অন্যদিকে লালপুর উপজেলায় ১৪১টি খামার ও কৃষক পর্যায়ে মোট ১ লাখ ৫৩ হাজার গরু রয়েছে।
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডাক্তার আবু হায়দার আলী এবং লালপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. চন্দন কুমার সরকার বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ একটি ভাইরাসজনিত রোগ। সংকর জাতের গরু এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। রোগটি মূলত মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। চিকিৎসা করালে ৭-২০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে যায়। এতে আতঙ্কিত না হয়ে খামার ও খামারের আশপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও মশামাছি মুক্ত রাখতে হবে।
তারা আরও বলেন, একটু সচেতন হলেই এ রোগ নিরাময় সম্ভব। বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা মূলক সভাও করা হচ্ছে।
রেজাউল করিম রেজা/এসজে/এএসএম