অবৈধ নিয়োগ: ৪ শিক্ষকের বেতন-ভাতার ৯২ লাখ টাকা আদায়ের সুপারিশ

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন হবিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯:৩৯ এএম, ২০ অক্টোবর ২০২২

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বক্তারপুর আবুল খায়ের উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৯ শিক্ষক-কর্মচারি অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। এমন অবৈধ নিয়োগ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে তারা চাকরিও করছেন। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অডিটে এমন তথ্য ধরা পড়েছে।

অডিটে চার শিক্ষককে বেতন-ভাতার মোট ৯১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৩৭ টাকা আদায়ের সুপারিশ করা হয়। এদিকে টাকা ফেরত না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) আব্দুল তাজ।

অডিট প্রতিবেদনের অনুলিপি পাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি জবাব দেবো। জবাব যদি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে আমি টাকা ফেরত দেব না। কারণ এটি দিলে তো আমি অপরাধী প্রমাণিত হবো। প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দেব।

প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি কোনো শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারে না, সুপারিশ করতে পারে। আবার সাময়িক বরখাস্তের মেয়াদ ৬০ দিনের বেশি হলে ওই শিক্ষককে পূর্ণ বেতন-ভাতা দিতে হয়।

আয়া লুবনা বেগম বলেন, আমার সার্টিফিকেট ভুয়া না। ২০০১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত আমি বিদ্যালয়ে পড়েছি। তবে তিনি কোন শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন, তা বলতে পারেননি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (সাময়িক বরখাস্তকৃত) মো. কামাল হোসেন বলেন, অডিট আপত্তি ছাড়াও আরও দুজন প্রভাষকের নিয়োগ অবৈধ। নৈশপ্রহরী জাহিদ হাসান জয়ের সার্টিফিকেটও ভুয়া।

‘জাহিদ বক্তারপুর স্কুলে পড়েননি। অথচ খণ্ডকালীন অফিস সহকারী সই নকল করে তাকে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তারা বিদ্যালয়ের সাবেক এক সভাপতির সাথে যোগসাজসে বিভিন্নভাবে আর্থিক অনিয়ম করছেন।

তিনি বলেন, অ্যাডহক কমিটি সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। আমি ঊধ্র্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করলেও, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ও মানবিক কারণে আমার যোগদানের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।

‘এমনকি ৬০ দিনের বেশি সাময়িক বরখাস্ত রাখার বিধান না থাকলেও তারা আমাকে প্রায় ৬ মাস ধরে সাময়িক বরখাস্ত করে রেখেছেন।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরিক্ষা অধিদপ্তরের অডিট প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৮৯ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্থাপন করা হয়। ১৯৯৪ সালে এটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি লাভ করে।

১৯৯৮ সালে এটিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। কলেজে উন্নীত করা হয় ২০১৫ সালে। বিদ্যালয়টিতে মোট ১৯ জন শিক্ষক রয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন কলেজ শাখায়। কর্মচারি রয়েছেন সাতজন। শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে আটজন শিক্ষক ও একজন কর্মচারীর নিয়োগ অবৈধ।

তাদের মধ্যে বিএড সনদ গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে আব্দুল তাজের নিয়োগ বিধি সম্মত হয়নি। নিয়োগ পরিক্ষায় একমাত্র প্রার্থী হন সহকারী শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা) মো. হামিদুর রহমান।

একই অভিযোগ সহকারি শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ দাশের বিরুদ্ধেও। এছাড়া তিনি জুনিয়র শিক্ষক পদে যোগদান করলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল মাধ্যমিকের শিক্ষক। নিয়োগ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই তাকে নিয়োগ দেন প্রধান শিক্ষক।

সহকারি শিক্ষক হরিপদ দাশও একক প্রার্থী ছিলেন। যোগদান করেন জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে। বিধান না থাকলেও জুনিয়র শিক্ষক থেকে তাকে সহকারী শিক্ষক করা হয়।

পূরণযোগ্য মহিলা কোটার জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয় সহকারী শিক্ষক (ধর্ম) হাবিবুল্লাহ, সহকারি শিক্ষক (কৃষিশিক্ষা) আবদুর রহমান ও সহকারি শিক্ষক মো. মেহেদী হাসান মানিককে।

সহকারি শিক্ষক মো. হুমায়ন কবির দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রি নেন। অথচ ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির সনদ অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

এমনকি, বিদ্যালয়টির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কোন পত্রিকায় দেওয়া হয়েছে, তা কোথাও উল্লেখ নেই। তাদের মধ্যে চারজন শিক্ষককে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত দেওয়া বেতন-ভাতার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

তারা হলেন- সহকারী প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) আব্দুল তাজের ৭১ হাজার ৪০০ টাকা, সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) মো. হামিদুর রহমানের ৩৮ লাখ ৫৭ হাজার ২৫৫ টাকা, বিজয় কৃষ্ণ দাশের ৩১ লাখ ৫২ হাজার ৭৩৮ টাকা ও হরিপদ দাশের ২১ লাখ ১২ হাজার ৯৪৪ টাকা।

একই সঙ্গে চলতি বছরের মে মাসের পর থেকে যে বেতন-ভাতা তারা নিয়েছেন, তাও ফেরত দিতে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

এসএএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।