ইরি-বোরো চাষে ব্যস্ত জয়পুরহাটের কৃষক


প্রকাশিত: ০৩:১৯ এএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জয়পুরহাটে ইরি-বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। শীত উপেক্ষা করে এখন দিন-রাত জমিতে সেচ দেয়া, জমিতে চাষ দেয়া, বীজতলা থেকে চারা তোলাসহ বোরো ধান চাষের নানা কাজে এখন দারুণ ব্যস্ত তারা।

মাঠে ব্যস্ততা দেখে ও তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে চাষাবাদ করে বাম্পার ফলনের মধ্য দিয়ে তারা বিগত সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান। এদিকে কয়েক বছর ধরে ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেক কৃষক অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন বলেও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের আনিছুর, আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ গ্রামের তফিজ উদ্দিন, কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের কাজী আনোয়ারুল ইসলাম ও ক্ষেতলাল উপজেলার দাসড়া গ্রামের খলিল উদ্দিনসহ অনেক চাষি জানান, গত ২ বছর যাবত ধানের মূল্য না পাওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে ভুট্টা, শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফসল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।  

Joypurhat-Rice

কৃষকরা আরও জানিয়েছেন, গত বছর রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ও শৈত্য প্রবাহের কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় তাদের চড়া দামে চারা কিনতে হয়েছিল। তবে বর্তমানে চারা থেকে শুরু করে ডিজেল ও সারের সঙ্কট না থাকায় বিভিন্ন মাঠে বোরো ধানের চারা রোপণের কাজ অনেকে ইতোমধ্যেই শেষ করে ফেলেছেন আবার কেউ কেউ শুরু করছেন ।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের কৃষক আবুল বাশার, মাসুদ রানা, ইব্রাহীম হোসেন ও শফিকুল ইসলাম এমন মন্তব্য করে জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর অনেক কৃষক তাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করেও চারা বিক্রয় করতে পারবেন। এ বছর বোরো ধান চাষে খরচ অন্যান্য বছরের চেয়ে কিছুটা কম বলে খানিকটা উজ্জীবিত কৃষকদের আশঙ্কা শুধু ধান-চালের ন্যায্য মূল্য নিয়ে।

পাঁচবিবি উপজেলার আয়মারসুলপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদ জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করবেন বলে সব প্রস্তুতিই প্রায় সম্পন্ন করেছেন। এরই মধ্যে প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ধানের চারা বাবদ ৫শ টাকা, জমি চাষ করা বাবদ ৮শ টাকা, দিনমজুর বাবদ ১ হাজার টাকা, সার কেনা বাবদ ১ হাজার ৩শ টাকা। এছাড়া ৩ মাস পানি সেচ বাবদ ২ হাজার টাকা,  নিড়ানী ও কিটনাশকসহ নানা ওষুধ বাবদ আরও প্রায় ১ হাজার টাকাসহ ধান কাটা-মাড়াইসহ আরও প্রয়োজন ২ হাজার টাকা। এ নিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদ বাবদ  সর্বমোট খরচ হবে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়াসহ দাম ভালো পাওয়া গেলে এই খরচ আর পরিশ্রম দুই সার্থক হবে। কৃষক আব্দুল ওয়াহেদ এর মত একই কথা বলেন জেলার অন্যান্য কৃষকরাও।

Joypurhat-Rice

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলায় এবার জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭২ হাজার ৩১৩ হেক্টর এবং চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮১ মে. টন। এর মধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ১৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬৮ হাজার ৪৯৫ মে. টন, পাঁচবিবি উপজেলায় ২০ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করে ৭৯ হাজার ৬৮৬ মে. টন চাল, আক্কেলপুর উপজেলায় ১০ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমি চাষ করে ৪১ হাজার ৫৫৩ মে. টন চাল, ক্ষেতলাল উপজেলায় ১০ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমি চাষ করে ৪৭ হাজার ৪২৪ মে. টন চাল এবং কালাই উপজেলায় ১৩ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমি চাষ করে ৬৯ হাজার ৫২৩ মে. টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এ জেড এম ছাব্বির ইবনে জাহান জাগো নিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্ মাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনার পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত ধান-চালের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।

রাশেদুজ্জমান/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।