সিদ্ধিরগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের বেহাল দশা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৯:০১ এএম, ২৪ অক্টোবর ২০২২
সিদ্ধিরগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের সামনের দৃশ্য-ছবি জাগো নিউজ

একসময় যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল টেলিফোন। মোবাইলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে টেলিফোনের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে গ্রাহক সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। গ্রাহক সংখ্যা কমে যাওয়ায় সিদ্ধিরগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসটি জরাজীর্ণ ভবনে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। কাজ না থাকায় সকালের দিকে কোনো কর্মকর্তাকে অফিসে পাওয়া যায় না। সবাই যার যার মতো অফিস করেন।

চলতি মাসের মাঝামাঝি সিদ্ধিরগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসে সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আদমজী-নারায়ণগঞ্জ সড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের পাশে অবস্থিত টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কার্যালয়টির সামনের একপাশ ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে এবং আরেক পাশে সবজি বাগান করা হয়েছে। চারপাশে ঝোপঝাড়ের কারণে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বোঝবার উপায় নেই যে এখানে একটি টেলিফোন অফিস রয়েছে। দোতলাবিশিষ্ট ভবনটিতে আটজনের জায়গায় একজন কর্মচারীকে অফিসে পাওয়া যায়। কোনো কাজ না থাকায় তাকে অনেকটা অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।

jagonews24পর্যাপ্ত জনবল নেই অফিসে-ছবি জাগো নিউজ

আরও পড়ুন: জেলায় খোলা থাকলেও উপজেলা অফিসে ঝোলে তালা 

সিদ্ধিরগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল, চিটাগাং রোড, সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন, আদমজী ইপিজেডসহ কয়েকটি এলাকায় মাত্র ৫০০’র মতো গ্রাহক আছেন। কয়েক বছর আগেও গ্রাহকসংখ্যা ৪ হাজারের মতো ছিল। বর্তমানে এ অফিসে একজন সহকারী কারিগর, একজন ব্যাটারিম্যান, তিনজন কনিষ্ঠ লাইনম্যান, একজন কনিষ্ঠ ক্যাবল জয়েন্টার, একজন বার্তা বাহক ও একজন কনিষ্ঠ বার্তা বাহক আছেন। গত বছরও এ অফিসে কর্মকর্তার সংখ্যা ১২ জন ছিল, কিন্তু তেমন কাজ না থাকায় তা এখন কমে ৮- এ নেমে এসেছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের ব্যাটারিম্যান ছিদ্দিকুর রহমান জানান, গত বছর আমাদের গ্রাহক সংখ্যা ১ হাজারের বেশি ছিল। কিন্তু ডিএনডি প্রজেক্ট ও সিদ্ধিরগঞ্জ লেকের কাজের কারণে আমাদের টেলিফোন লাইনের অনেক প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ক্যাবল কাটা পড়েছে। ফলে গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ সমস্যার কারণে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা আরও কমে গেছে। এ সমস্যার সমাধান না হওয়ায় নতুন গ্রাহকদের কোনো টেলিফোন সংযোগ দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আরও পড়ুন: অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও মোবাইল ফোনে না রাখাই ভালো 

তিনি জানান, লেক কর্তৃপক্ষ আমাদের বিষয়টি অবহিত না করেই লাইনগুলো কেটে দেয়। যদিও তারা বলছে আমাদের নাকি চিঠি দিয়েছে কিন্তু আমরা এমন কোনো চিঠি পাইনি। তবে সরকার থেকে যে নতুন প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে সে প্রজেক্টের কাজ সিদ্ধিরগঞ্জে শুরু হলে আমরা গ্রাহকদের আরও উন্নত সেবা প্রদান করতে পারবো।

তিনি আরও জানান, আগে একটি বাসায় টেলিফোন সংযোগ দিতে গেলে একজন গ্রাহককে ১৮ হাজার ৪০০ টাকা প্রদান করা লাগতো কিন্তু এখন মাত্র ২ হাজার ১৫০ টাকা প্রদান করলেই টেলিফোন লাইন সংযোগ নেওয়া সম্ভব। চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে এখনো টেলিফোনের অনেক চাহিদা রয়েছে যোগ করেন তিনি।

jagonews24জরাজীর্ণ ভবনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কাজ-ছবি জাগো নিউজ

তিনি বলেন, গ্রাহকসেবা দেওয়ার জন্য আমাদের অফিসের সব যন্ত্রপাতি সচল। তবে অফিসের এবং যন্ত্রপাতির ছবি, ভিডিও ধারণ করতে চাইলে অফিসের ভেতর কোনো ছবি তোলা কিংবা ভিডিও ধারণ করার নিয়ম নেই বলে জানান তিনি।

নারায়ণগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক টেলিকম-১ (সিদ্ধিরগঞ্জ) মাহবুবুর রহমান জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে আমাদের গ্রাহকসংখ্যা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তবে ডিএনডি প্রজেক্টের কারণে আমাদের কিছু ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেজন্য আমরা উদ্যোগ হাতে নিয়েছি এখন থেকে ফাইবার অপটিক্যালের মাধ্যমে টেলিফোন লাইন সংযোগ দেব। নারায়ণগঞ্জে এই কাজ অলরেডি শুরু হয়েছে, সিদ্ধিরগঞ্জেও আশা করি দু-এক বছরের মধ্যে এই কাজ শুরু হবে।

আরও পড়ুন: চুরি হওয়া মোবাইল যার কাছে পাওয়া যাবে তারও হতে পারে সাজা 

নারায়ণগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম জানান, টেলিফোনের গ্রাহক কমে গেলেও আমাদের ইন্টারনেটের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জে কিছু লাইন কেটে যাওয়ায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে একটি প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রজেক্টের প্রথম কাজ হচ্ছে দেশের সব জেলায় অপটিক্যাল ক্যাবলের মাধ্যমে টেলিফোন সংযোগ পৌঁছে দেওয়া। পরে পর্যায়ক্রমে উপজেলাগুলোয়ও এই প্রজেক্টের কাজ শুরু হবে। তবুও সিদ্ধিরগঞ্জ নারায়ণগঞ্জের একটু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হওয়ায় আমরা সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকার উদ্যোগে নিয়েছি। প্রজেক্ট থেকে এই দুটি জায়গায় কাজের অনুমোদন পেলে আমরা কাজ শুরু করব।

রাশেদুল ইসলাম রাজু/এসএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।