নড়াইলে ফসলি জমি ও নদী দখল করে ইটভাটা
নড়াইলে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ফসলি জমি ও নদী দখল করে গড়ে উঠছে ইটভাটা। আর এ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে পুড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে পরিবেশ বিপন্নের পাশাপাশি শত শত হেক্টর কৃষি জমি হুমকির মুখে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ইটভাটা রয়েছে দেড় শতাধিক। তবে সরকারি হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে পরিচালিত মোট ইটভাটার সংখ্যা ৪২টি যার মধ্যে লাইসেন্সকৃত ১৭টি এবং বাকি ২৩টির অনুমোদন নেই।
জানা গেছে, লোকালয়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটায় বেপরোয়াভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কৃষি জমির উপরি ভাগের উর্বর মাটি ব্যবহার হচ্ছে ইটের কাঁচামাল হিসেবে। ফলে একদিকে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে গাছপালা অন্যদিকে উর্বরতা হারিয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে কৃষিজমি। প্রশাসনের নাকের ডগায় নির্বিচারে চলা পরিবেশঘাতী এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের দৃশ্য চোখে না পড়লেও প্রশাসনের দাবি বেআইনীভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, আকারভেদে একটি ইটভাটা গড়ে তুলতে কমপক্ষে ৫ (৫শ শতক) একর জমির প্রয়োজন হয়। কোনো কোনো ইটভাটা তৈরি করতে ২০-২২ একর জমিও প্রয়োজন হয়। ১০ বছর আগে জেলায় হাতে গোনা ১৫-২০টি ভাটা ছিল। কিন্তু এখন তা বেড়ে দেড় শতাধিকে পৌঁছেছে। আর এ সকল ইটভাটা তৈরি করতে অন্তত ৬শ একর ফসলি জমি ব্যবহৃত হয়েছে বলে কৃষকদের দাবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটার ম্যানেজার জানান, সাধারণত মধ্যম সারির একটি ভাটায় বছরে ৪০/৫০ লাখ ইট পোড়ানো হয়ে থাকে। আর প্রতি ৮ হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় ১ হাজার ঘন ফুট মাটি। যে মাটির যোগান দেয়া হয় কৃষি জমি থেকে। এজন্য প্রতিটি ভাটায় বছরে ৫/৬ একর জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহৃত হয়। সে হিসেবে দেড় শতাধিক ভাটাতে প্রতি বছর অন্তত ৭শ একর জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি ব্যবহৃত হয়।
প্রতিদিন ইট পোড়ানোর জন্য গড়ে প্রতিটা (একটি) ভাটায় ৩৫-৪০ মণ কাঠ পোড়াতে হয়। তাহলে জেলার দেড় শতাধিক ইটভাটায় প্রতিদিন ৬ হাজার মণ কাঠ পোড়ে।
এক কাঠ ব্যবসায়ী জানান, ইটভাটায় সাধারণত আমরা যে কাঠ দেয় সেগুলো বিভিন্ন গ্রাম থেকে কিনে ভাটায় পৌঁছে দেয়। গড়ে প্রতিটা গাছে ৭ থেকে ৮ মণ কাঠ পাওয়া যায়।
হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন ইট ভাটায় আম, জাম, রেইন্ট্রি, কদম, জামরুল, কাঁঠাল, খেজুর, নারকেলসহ ৮শ তাধিক ফলজ ও বনজ গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটার মালিক জানান, বছরে ৫ মাস আমাদের ইট পোড়ানোর মৌসুম থাকে। ৫ মাসের প্রতিদিনই আমাদের ভাটাগুলোতে একই রকমের জ্বালানির চাহিদা থাকে। সে হিসেবে ৫ মাসে অন্তত ২৪ হাজারেরও বেশি গাছ কেটে বনভূমি উজাড় হচ্ছে।
কৃষি জমি আর জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠা অনুমোদনহীন এসব ভাটায় ধোয়া নির্গমনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশঘাতী স্বল্প উচ্চতার অবৈধ টিনের তৈরি চিমনি।
এদিকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইটভাটা চালানোর ক্ষেত্রে অজুহাতের শেষ নেই এসব ভাটা পরিচালনাকারীদের। পাঁচগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলামের ইটভাটার ম্যানেজার হুমায়ুন বলেন, ডিসি অফিসে প্রতি বছর ৯০ হাজার টাকা প্রদান করা হয় বলেই নদী দখল আর কাঠ পোড়ানো যায়।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আইন না মেনে পরিচালিত ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া চলমান রয়েছে বলে দাবি করেন জেলা প্রশাসক।
হাফিজুল নিলু/এসএস/এবিএস