জরাজীর্ণ ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে সিন্দুবালার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ১০:৪৯ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০২২

৬২ বছর বয়সী বৃদ্ধা সিন্দুবালা সরকার। প্রায় ছয় বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। নেই কোনো সন্তানাদি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে করছেন জীবনযাপন। দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ একটি ঘরে করেন বসবাস। কুয়াশা-বৃষ্টি-বাতাসের আতঙ্কে ভাঙা ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে তার।

বৃদ্ধা সিন্দুবালা গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের তরফবাজিত (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের বসবাস করেন। তিনি ওই গ্রামের মৃত মনিন্দ্রনাথ সরকারের স্ত্রী।

জানা যায়, মাত্র কয়েক শতক জমিতে রেখে সিন্দুবালার স্বামী মারা গেছেন। এছাড়া নেই কোনো সহায়-সম্বল। এরইমধ্যে বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও বেঁচে থাকার তাগিদে কখনো কৃষকের ফসলি জমিতে শ্রম বিক্রি, আবার কখনো অন্যের বাড়িতে করতে হয় ঝিয়ের কাজ। এভাবে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন সিন্দুবালা। এরই মধ্যে ওইসব কাজের জন্যও কদর কমেছে তার। কারণ, বার্ধক্য ও নানা অসুস্থতার কারণে এলাকার মানুষ তাকে এখন কাজের জন্য তেমনটা ডাকেন না। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে সিন্দুবালাকে।

এ পরিস্থিতিতে ওই বিধবার একমাত্র শোয়ার ঘরটিও জরাজীর্ণ অবস্থা। ছিদ্র টিনের চালায় লাগানো হয়েছে পলিথিন ও ত্রিপল। দিনের বেলায় বেড়ার ফুটো দিয়ে দেখা যায় সূর্যের আলো। রাতে চালার ওপরে দিয়ে উকি দেয় আসমানের তারা। জোড়াতালি এ ভাঙা ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে চলছেন সিন্দুবালা।

একমুঠো খাবারের যোগানে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রাতে ঠিকভাবে ঘুমাবেন কিন্তু চোখে আসে না ঘুম। শীতের কুয়াশায় আর বৃষ্টি-বাতাসে আতঙ্কে একাকী নির্ঘুম রাত কাটে তার।

বর্ষাকালে আকাশের মেঘ দেখলে দৌড় দিতে হয় অন্যের বাড়িতে। আর শীতকালে কনকনে বাতাস আর কুয়াশায় ভিজে যায় বিছানাপত্র। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এ ঘরে বসবাসের কারণে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে সিন্দুবালার শরীরে। এসব রোগ নিরাময়ে নিয়মিত ওষুধ খাবেন, এমন সামর্থ্যও নেই।

স্থানীয় সুনীল চন্দ্র শিপন জাগো নিউজকে বলেন, স্বামী হারিয়ে সিন্দুবালা এখন খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। একটি মাত্র ঘর, তাও আবার ভাঙাচোরা। একদম বসবাস অনুপযোগী। সরকারি কিংবা কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান তাকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হতো।

বিধবা সিন্দুবালা জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি ঘর পাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো কাজ হয়নি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমাকে যদি একটু মাথা গোজার ঠাঁই করে দিতো, তাহলে হয়তো শেষ বয়সে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম।

জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, পরিষদের মাধ্যমে বিধবা সিন্দুবালাকে প্রতিনিয়ত অন্যান্য সুযোগ সুবিধাগুলো দেওয়া হয়। তার থাকার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রোকসানা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, জামালপুর ইউনিয়নে যখন খাস জমিতে ঘর নির্মাণ হবে, তখন যদি সিন্দুবালা ওখানে যেতে চান তাহলে তাকে সেখানে ঘর দেওয়া হবে।

এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।