বালাশী-বাহাদুরাবাদ নৌরুট

১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও চলছে না ফেরি-লঞ্চ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৬:৪৪ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২২

উত্তরের আট জেলায় যোগাযোগ সহজ করতে গাইবান্ধার বালাশী থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌরুটে ফেরি সার্ভিসের জন্য নেওয়া হয়েছিল মেগা প্রকল্প। ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুঘাটে নির্মাণ করা হয় টার্মিনাল। কিন্তু ওই নৌরুট ফেরি চলাচলের অনুপযোগী বলে জানায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। লঞ্চ সার্ভিস চালু করলে সেটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ঘাট ও বাহাদুরাবাদ ঘাট চালু হয়। এ দুঘাটে ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। ১৯৯০ সালে নদীর নাব্য সংকটের অজুহাতে তিস্তামুখ ঘাটটি স্থানান্তর করা হয় একই উপজেলার উজানে বালাশীতে। নতুন করে সেখানেও ব্যয় করা হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। নির্মাণ করা হয় ত্রিমোহিনী রেলস্টেশন থেকে বালাশীঘাট পর্যন্ত নতুন প্রায় ৬ কিলোমিটার রেলপথ। সেখানেও কয়েক বছর চলার পর যমুনায় নাব্য হ্রাসের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর ২০০০ সাল থেকে পুরোপুরি এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতেন এ অঞ্চলের মানুষ। বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ কমাতে বিকল্প পথ তৈরির যুক্তি দেখিয়ে ২০১৪ সালে বালাশী ও বাহাদুরাবাদে ফেরিঘাট চালুর লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়।

২০১৭ সালের অক্টোবরে একনেকের সভায় বালাশী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটটি আবারও চালু করতে ফেরিঘাট টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। পরে দুদফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ১৪৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।

বিআইডব্লিউটিএর কারিগরি কমিটি হঠাৎ নাব্য সংকট ও ২৬ কিলোমিটার বিশাল দূরত্বের নৌপথসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে নৌরুটটি চলাচলের অনুপযোগী বলে ঘোষণা করে।

jagonews24

যাত্রী পারাপারে চলতি বছর পরীক্ষামূলকভাবে এ নৌরুটে চারটি ছোট লঞ্চ চলাচল শুরু করে। নাব্য সংকটে এখন আর চলছে না লঞ্চও। ফলে সরকারের মেগা প্রকল্প থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের মানুষ।

বালাশীঘাট টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, বাস টার্মিনাল, টোল আদায় বুথ, পুলিশ ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস, আধুনিক ডিজাইনের মসজিদ, খাবার হোটেল, আনসার ব্যারাকসহ বেশকিছু নান্দনিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। শুধু মাত্র খাবার হোটেল চালু থাকলেও অন্যসব কিছু বন্ধ। নয়নাভিরাম অবকাঠামো এখন জনমানবহীন পড়ে আছে।

বালাশীঘাটে নৌকার জন্য অপেক্ষারত রংপুরের বাসিন্দা হাসিবুল হাবিব জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ময়মনসিংহে চাকরি করি। আমরা আগে নিরাপদে এ নৌরুটে পারাপার হতাম ফেরিতে। বর্তমানে কয়েকটি ছোট লঞ্চ চলাচল করছিল। কিন্তু সেগুলোও এখন বন্ধ। এ কারণে আমাদের নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নদী পার হতে হচ্ছে।’

কথা হয় স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর সাত্তার মিয়ার সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বালাশীঘাট থেকে নদীপথে ফেরি সার্ভিস চালু হলে এ এলাকায় বেকারত্বের হার কমে যেত। এ এলাকায় শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটতো।’

এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম সেলিম পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নৌরুটটি একসময় উত্তরবঙ্গের আট জেলার মানুষ ব্যবহার করতো। প্রতিদিন এ বালাশীঘাটে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটতো। স্বল্প সময়ে মানুষ ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা জেলায় যাওয়ার জন্য এ নৌরুটটি ব্যবহার করতো।’

jagonews24

তিনি আরও বলেন, ‘চলতি বছরের মার্চে এ নৌরুটে পরীক্ষামূলকভাবে ছোট কয়েকটি লঞ্চ চলাচল শুরু করে। নদীতে চর ভেসে ওঠায় লঞ্চগুলো আর চলাচল করতে পারছে না। এ নৌরুটকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যদি দেখা হতো তাহলে দুপাশের মানুষ দ্রুত তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।’

গাইবান্ধা লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘চলতি বছরে প্রাথমিকভাবে লঞ্চ সার্ভিস চালু করা হলেও নাব্য সংকটের কারণে মাঝে মধ্যে লঞ্চ আটকা পড়ছে। এখন পুরোপুরি লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে বিআইডব্লিউটিএর চারটি ড্রেজার মেশিন সব সময় নদী খননের কাজে নিয়োজিত থাকার কথা থাকলেও এখন কাজ করছে একটি।’

এদিকে গাইবান্ধার বালাশীঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে গত তিন সপ্তাহ ধরে অবস্থান করছেন বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। বালাসী-বাহাদুরাবাদ লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক করতে সরেজমিনে সমীক্ষা চালাচ্ছেন তারা। কীভাবে বন্ধ নৌরুট সচল করা য়ায়, বিষয়ে জেলা প্রশাসনসহ লঞ্চ মালিক সমিতির সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন প্রস্তাবনাও দিয়েছেন তারা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ ছাড়া আমরা কেউই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবো না।’

এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।