সাঁথিয়ায় সোঁতি বাঁধ, ১০ বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যাহত

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০৬:৪৪ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২২

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাকেশ্বরী নদীর পানি নিষ্কাশন খালে বাঁশের বেড়া ও সোঁতি জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। করমজা ইউনিয়নের শামুকজানি বাজারের দক্ষিণে ও দত্তপাড়া গ্রামের পশ্চিমে বড়গ্রাম মাঠের ভিটা এলাকায় এ সোঁতি জাল স্থাপন করা হয়েছে। এতে সাঁথিয়া উপজেলার অন্তত ১০টি বিলে পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

এ এলাকার প্রায় ৪০ হাজার বিঘা জমিতে রবি শস্য চাষ বিলম্বিত ও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নির্বিচারে ছোট-বড় ও মা মাছ ধরার ফলে এসব বিলের মৎস্য ভান্ডারও ধবংস হয়ে যাচ্ছে।

চাষিরা জানান, সাঁথিয়ার টেংড়াগাড়ী বিল, গাঙভাঙ্গার বিল, ঘুঘুদহ বড় ও ছোট বিল, মুক্তর ধর, জামাই দহ, আইরেদহের বিল, সোনাই বিল, কাটিয়াদহের বিল, গজারিয়া বিলসহ অন্তত ১০টি বিলের পানি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ক্যানাল দিয়ে বর্ষাকাল শেষে দ্রুত নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু বেড়া পাউবোর কাগেশ্বরী-ডি-২ ক্যানালের দুটি স্থানে সোঁতি বাধ (সুক্ষ জালের বাঁধ) দেওয়া হয়েছে। বাধ দিয়ে মাছ ধরছেন এলাকার প্রভাবশালী মহলের লোকজন। সোঁতিজালের বাধে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় সাঁথিয়ার বিলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

sathi1

ঘুঘুদহ বিলপাড়ের চাষি আব্দুস সাত্তার, রফিকুল ইসলাম জানান, সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে এসব বিলের চাষের জমি জেগে ওঠে। জেগে ওঠার পর জমিতে ‘জো’ এলে নরম পলি মাটিতে কৃষক সরিষা, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন বপন করেন। কিন্তু এবছর পানি নিষ্কাশন হওয়ার মুখগুলোতে স্থানীয় সোঁতি জাল স্থাপন করায় বিলের পানি নভেম্বরেও নামতে পারছে না। ফলে আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, ক্যানালের মাঝে প্রভাবশালীরা দুই দিকে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়েছেন। মাঝে কিছুটা সরু জায়গা খালি রাখায় সেখানে প্রবল পানি প্রবাহ সৃষ্টি হচ্ছে। এটাই স্থানীয় ভাবে ‘সোঁতি বাধ’ বলে পরিচিত। ‘সোঁতি বাঁধ’ তৈরিতে বাঁশ, তালাই, পলিথিন, নেট, ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

কৃষক চাঁদ আলী ও মন্জু জাগো নিউজকে বলেন, ‘পানি দ্রুত নিষ্কাশন না হওয়ায় আমরা বীজতলা তৈরি করতে পারছি না।’

ঘুঘুদহ গ্রামের কাউছার বলেন, ‘আমাদের ধান এখনো পানির মধ্যে। পানি নামছে না। কবে ধান কাটবো আর কবেই বা রবি শস্য বুনবো তা বুঝতে পারছি না।’

sathi1

আফড়া চরপাড়া মহল্লার কৃষক জানে আলম সরদার বলেন, ‘বিলে আমার ১৫-১৬ বিগে (বিঘা) জমিতে আমন দান (ধান) আছে। দান কাইটে পিঁজ (পেঁয়াজ), গম, শষ্যের আবাদ করবো। যদি সোঁতির কারণে বিলির (বিল) পানি আটকে থাহে তালি (তাহলে) আমাগরে পিঁজির চারা ক্ষতি অয়া যাবি।’

জানতে চাইলে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, এ বিষয়ে মৌখিকভাবে কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। তাদের লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলেছি

সাঁথিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম বলেন, সোঁতি জাল স্থাপনের বিষয়টি জানা নেই। যদি কেউ দিয়ে থাকেন তাহলে সেটা অবৈধ। এলাকা পরিদর্শন করে সোঁতিজাল পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এগুলো অপসারণ করা হবে।

আমিন ইসলাম জুয়েল/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।