প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন বকুলি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০৯:৫১ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০২২
উপহারের ঘর পেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বকুলি-ছবি জাগো নিউজ

ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না বকুলি। স্বামী নেই। মারা গেছেন। দুই ছেলে নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকতেন। খেয়ে না খেয়ে কোনোভাবে জীবন কাটাতেন। অভাব ছিল তার নিত্যসঙ্গী। কিন্তু সেই প্রতিবন্ধী বকুলি আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এখন দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন। তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন মুজিব শতবর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসন প্রকল্প। মাদারীপুর মস্তফাপুরের খৈয়রভাঙ্গা এলাকায় সরকারিভাবে পাওয়া একটি নিজের ঘর তাকে ঠিকানা দিয়েছে, দিয়েছে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ। দেখছেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বকুলি। বয়স ৩৫। বরিশালের গৌরনদীর আল-আমিন সরদারের মেয়ে। জন্মের পর থেকেই অভাবের মধ্যে বড় হতে হয় তাকে। একটু বড় হতেই বাবা তাকে বিয়ে দেন। মাদারীপুরের কালকিনির ঠেঙ্গামারা শিকদারবাড়ির লিখন শিকদারের সঙ্গে বিয়ে হয়। বাল্যবিয়ের শিকার হন তিনি। সংসার জীবন কি তা বোঝার আগেই কোলজুড়ে আসে প্রথম ছেলেসন্তান শান্ত শিকদার (১৭)। এরপর দ্বিতীয় ছেলে জুবায়ের শিকদার (১৫)। প্রতিদিন অভাবের সাথে যুদ্ধ করতে করতে বকুলি হতাশ হয়ে পড়েন। ঠিক সেই সময়ে ২০০৮ সালে ব্রেন স্টোক করে মারা যান স্বামী লিখন শিকদার। ছোট ছেলেদের নিয়ে জীবনে নেমে আসে চরম অন্ধকার। শুরু হয় তার বেঁচে থাকার জন্য নতুন যুদ্ধ। এভাবেই চলে যায় বেশ কয়েক বছর।

এরপর ভূমিহীনের কারণে প্রায় এক বছর তিন মাস আগে তার ভাগ্যে জোটে মাদারীপুর মস্তফাপুরের খৈয়রভাঙ্গা এলাকায় মুজিব শতবর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের একটি সরকারি ঘর। কিন্তু তিনি কখনও ভাবেননি তার একটি নিজের ঘর হবে। আর সেই ঘর তাকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সরকার থেকে পাওয়া ঘরের পেছনের বারান্দার একটি অংশে বকুলি মুদি দোকান দিয়েছেন। ৩০ হাজার টাকার মালামাল দিয়ে শুরু করেছেন ব্যবসা। দোকানে বিস্কুট, আচার, চানাচুর, চকলেট, চিপসসহ নানা ধরনের খাবার বিক্রি করেন। পাশাপাশি চাও বিক্রি করেন। বিকেল হলে এই গুচ্ছগ্রামের অনেক মানুষ বকুলির দোকানে এসে চা খান। শুধু গুচ্ছগ্রামের নয় আশপাশ থেকেও মানুষজন এসে চাহিদামতো খাবার কেনেন, চা খান। প্রতিদিন তার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বিক্রি হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। তার সঙ্গে দুই ছেলেসহ মাও থাকেন। বড় ছেলে শান্ত গাড়িতে বাদাম বেচেন। তা থেকে কিছু আয় হয়। এভাবেই চলে তার সংসার।

প্রতিবন্ধী বকুলি বলেন, কখনও নিজের ঘর হবে ভাবিনি। সরকার আমাদের ঘর দিয়েছে। সেই ঘরে আসার পর আমার দিন বদলেছে। আমি নিজেই একটি দোকান দিয়েছি। লাভের টাকায় সংসার চলে। তাই আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তার জন্যই আমি আজ নতুনভাবে স্বপ্ন দেখছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবন্ধী বকুলির দোকান দেখে অনুপ্রেরিত হয়ে গুচ্ছগ্রামের আরেক নারী আছিয়া বেগম মুদি দোকান দিয়েছেন। তার স্বামী আবুল ফকির অটোরিকশা চালান। এক ছেলে। প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। আছিয়া বেগমের শাশুড়ি জরিতুনের নামে সরকারি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। সেই ঘরের সামনে উঠোনে মুদি দোকান দিয়েছেন।

আছিয়া বেগম বলেন, প্রতিদিন ২০০ থেকে আড়াইশ’ টাকার মতো বিক্রি করি। টাকার জন্য মাল উঠাতে পারি না। মাল উঠাতে পারলে বিক্রিও ভালো হতো।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন বলেন, বকুলি একজন প্রতিবন্ধী নারী। তার নিজের কোনো ঠিকানা ছিল না। এখন ঠিকানা পাওয়ার পর তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখছেন আরও বড় হওয়ার। আসলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই পরিবারগুলো এক একটি দিনবদলের গল্প। এমনই একটি গল্প হচ্ছে এই বকুলির গল্প।

এসএইচএস/এএসএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।