পিরোজপুরে এ দিনেই উড়েছে লাল সবুজের বিজয় পতাকা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পিরোজপুর
প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২

পিরোজপুর হানাদারমুক্ত দিবস আজ (৮ ডিসেম্বর)। ১৯৭১ সালের এ দিনেই শক্র মুক্ত হয়েছিল পিরোজপুর। এই দিন ঘরে ঘরে উড়েছিল লাল সবুজের বিজয় পতাকা। তাইতো পিরোজপুরের ইতিহাসে এ দিনটি বিশেষ স্মরণীয় দিন।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সারা বাংলাদেশ পাক হানাদাররা আক্রমণ শুরু করলেও পিরোজপুরে প্রথম পাক বাহিনী প্রবেশ করে ১৯৭১ সালের ৪ মে। শহরের নৌ-প্রবেশদ্বার হুলারহাট বন্দর থেকে পাক হানাদার বাহিনী প্রবেশের পথে প্রথমেই তারা শহরের মাছিমপুর ও কৃষ্ণনগর গ্রামে শুরু করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। এরপর মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ মাসে স্থানীয় শান্তিকমিটি, আলবদর ও রাজাকারদের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়া হয়। হত্যা করা হয় কয়েক হাজার মুক্তিকামী মানুষকে।

পিরোজপুরকে হানাদার মুক্ত করতে সুন্দরবনের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দল ৭ ডিসেম্বর রাত ১০টায় পিরোজপুরের দক্ষিণপ্রান্ত পাড়েরহাট বন্দর এবং উত্তর দিকের নাজিরপুর দিয়ে শহরে প্রবেশ করে। মুক্তিবাহিনীর এ আগমনের খবর পেয়ে পাক হানাদাররা শহরের পূর্বদিকের কচানদী দিয়ে লঞ্চ, স্টিমার ও বিভিন্ন জাহাজ দিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়।

এর আগে স্বরূপকাঠি পেয়ারা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের গড়ে তোলা দুর্গ পাকবাহিনী আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বহু পাকসেনা নিহত হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে পাকবাহিনী পরাজিত হয়।

শহীদ হন তৎকালীন মহকুমা পুলিশ প্রধান ফয়জুর রহমান আহম্মেদ, মহকুমা প্রশাসক (দায়িত্ব) মিজানুর রহমান, মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ওমর ফারুক (লোহার রডের সাথে বাংলাদেশের পতাকা বেধে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়), ভাগীরথী সাহা (মোটর সাইকেলের পিছনে বেধে এক কিলোমিটার রাস্তায় টেনে হত্যা করা হয়), ছাত্র নেতা ফজলুল হক, পূর্ণেন্দু বাচ্চু, সেলিমসহ প্রায় ৩৫ হাজার মানুষকে হত্যা করে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা। পিরোজপুর অঞ্চলে সম্ভ্রম লুটে নেয় প্রায় পাঁচ হাজার মা-বোনের। অবশেষে ৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর ছেড়ে তারা চলে যেতে বাধ্য হয়।

পিরোজপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন এবং মুক্ত দিবস উদযাপন পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৯টায় শহীদ ভাগীরথী চত্বরে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, পরে আনন্দ শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্বাধীনতা মঞ্চে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এছাড়াও মরোনত্তর সম্মাননা দেওয়া হবে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহীদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১ নম্বর আসামি লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদ ওমর ফারুক, শহীদ ফজলুল হক, শহীদ পূর্ণেন্দু বাচ্চু এবং শহীদ সেলিমকে। সন্ধ্যায় স্বাধীনতা মঞ্চে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে মোমবাতি প্রজ্বলন করবেন পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক।

জেএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।