গ্রামে এখনো দেখা মেলে দাঁড়িয়াবান্ধা খেলার
এক সময় প্রায় শতাধিক গ্রামীণ খেলাধুলার প্রচলন ছিল। এর মধ্যে দাঁড়িয়াবান্ধা, কানামাছি, বৌছি, হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, ডাংগুলি, মারবেল, হাঁসধরা, রশিটানা, ইচিং-বিচিং, ওপেন টু বায়স্কোপ, লাঠিখেলা, লুকোচুরি, মোরগ লড়াই, কুতকুত, বিস্কুট খেলা, পুতুলের বিয়ে, চড়ুইভাতি, এলাডিং বেলাডিং, সাত চাড়া অন্যতম। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ এসব খেলায় অংশ নিতেন।
খোলা জায়গা ও মাঠ স্বল্পতা এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব জনপ্রিয় খেলা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ভিডিও গেম, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইল ফোনেই ব্যস্ত বেশিরভাগ। তবে গ্রামাঞ্চলে এখনো কয়েকটি খেলা টিকে আছে। পহেলা বৈশাখ ও গ্রামীণ মেলার সময় এসব খেলার আয়োজন হয়। এছাড়া কিছু পাড়ায়ও ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশীকে নিয়ে পড়ন্ত বিকেলে কিংবা জ্যোৎস্না রাতে দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুটসহ বেশকিছু গ্রামীণ খেলা এখনো প্রচলিত আছে।

১৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার উত্তর নারিকেল বাড়িয়া গ্রামে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। পড়ন্ত বিকেলে গ্রামের কারামাতিয়া ঈদগাহে বিভিন্ন বয়সী লোক দাঁড়িয়াবন্ধা খেলছেন। পাশে থাকা কয়েকজন খেলাটি মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করেন।
খেলায় অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, দু’যুগ আগেও গ্রামীণ খেলার যৌবন ছিল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় লোক-সংস্কৃতি আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এক সময় গ্রামীণ উৎসবগুলো সব বয়সী মানুষের প্রাণের খোরাক বলে গণ্য হতো। বর্তমানে এসব খেলা শিশু-কিশোরদের কাছে অজানাই থেকে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই খেলার মাঠ বাদ দিয়ে মোবাইলে গেম খেলছে। কোথাও কোথাও খেলার মাঠ, পতিত জায়গা, বাড়ির উঠানও আগের মতো নেই। সেই কারণে সামাজিক অবক্ষয় ও তরুণরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে।

স্কুলছাত্র সাকিব জানায়, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বিকেলে সহপাঠী ও ছোট-বড়দের নিয়ে দাঁড়িয়াবান্ধা খেলি। আগে শুকনো মৌসুম এলেই মাঠে ঘাটে এ খেলা হতো বলে শুনেছি। তাই আমরাও খেলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছি।
শুক্তাগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ইদ্রিস হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের ঐতিহ্যবাহী লোক-সংস্কৃতির পরিচয় করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। যাতে আধুনিককালে তারা এ খেলা মায়ার বাঁধনে বুকে লালন করতে পারে। মানব জীবনে শরীরচর্চা ও চিত্তবিনোদনের কথা বাদ দেওয়া বা হেলাফেলা করা যায় না।
এ শিক্ষক মনে করেন, ঈদগাহে বিভিন্ন বয়সীদের দাঁড়িয়াবান্ধা খেলা প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। ঐতিহ্যবাহী এসব খেলা উদ্ধারে স্কুল ও কলেজের পাশাপাশি মাদরাসায় আগের ন্যায় সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ ও নিয়ম বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন। যখন প্রকৃতি থেকে কোনো কিছু হারিয়ে যায় বা বিলুপ্তি ঘটে তখন দারুণ কদর বাড়ে। লালন শাহর গান ‘সময় গেলে সাধন হবে না’। যা আমাদের সবার ধরে রাখা প্রয়োজন।
এসজে/জেআইএম