খরস্রোতা ‘মারিখালী’ এখন মরা নদ
এক সময়ের খরস্রোতা মারিখালী এখন মরা নদ। দূষণ-দখলে বিলীনের পথে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার এ নদ। পানি প্রবাহ না থাকায় আশপাশের এলাকায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন থেকে শুরু হয়ে নদটি ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলেছে মারিখালী। আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদে এক সময় নৌকাসহ বিভিন্ন ধরনের যান চলাচল করতো। সময়ের সঙ্গে যৌবন হারাতে শুরু করে মারিখালী। তলদেশ ভরাট, দখল ও দূষণে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের জিয়ানগর, ভবনাথপুর, বিরেশেরগাঁও, রতনপুর, ভাটিবন্দর, মরিচাকান্দী, জৈনপুর, হাবিবপুর, পিরোজপুর, কাদিরনগর, দুধঘাটা, মঙ্গলেরগাঁও; শম্ভুপুরা ইউনিয়নের কাজিরগাঁও, দুর্গাপ্রসাদ, চৌধুরীগাঁও, ময়নাকান্দী, টেকপাড়া, মুর্গারচর ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নের কাবিলগঞ্জ, আলাবদী, নালআলাবদী, ভিন্নিপাড়া, ঋষিপাড়া, কাবিলগঞ্জ, দমদমা, খুলিয়াপাড়াসহ অন্তত ৩০ গ্রামের লক্ষাধিক বাসিন্দা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

মেহেদী হাসান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ছোটবেলায় আমরা এ নদে গোসল করতাম। কিন্তু নদের দুপাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য নদে পড়ে মারাত্মকভাবে দূষণ করছে। এর ফলে এ নদের পানি এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেছে।
আবুল হোসেন নামের আরেক বাসিন্দা জানান, পূর্বে এ নদের পরিবেশ উপভোগ করতে অনেক মানুষ ছুটে আসতো। কিন্তু দখলে নদটি ক্রমশ সরু হয়ে গেছে। তাই এ নদের আগের জৌলুস এখন আর নেই।

সাইফুল আলম নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জানান, নদে আগে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। এছাড়া আমরা এ নদের পানি পান করতে পারতাম। কিন্তু দূষণের কারণে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। আবার নদের পানি খাওয়ার অযোগ্য হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন জানান, শুধু মারিখালী নদই না, সোনারগাঁয়ের অসংখ্য নদ-নদী এভাবে দূষণে-দখলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।

নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, যারা এ নদকে দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নদটিতে নাব্য সংকট ফিরিয়ে আনতে খুব শিগগিরই ড্রেজারের মাধ্যমে নদটি খনন করার কাজ শুরু হবে।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ান-উল-ইসলাম জানান, নদটি দখলমুক্ত এবং দূষণমুক্ত করতে যা প্রয়োজন সেটি আমরা করবো। শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাশেদুল ইসলাম রাজু/আরএইচ/জেআইএম