হাসপাতালে গৃহবধূর মরদেহ রেখে পালালেন স্বামী-শাশুড়ি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ০৮:৩৬ এএম, ০৩ জানুয়ারি ২০২৩

কুষ্টিয়ায় মিনা (২০) নামের এক গৃহবধূর মরদেহ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেছেন তার স্বামী ও শাশুড়ি।

সোমবার (২ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের মালিগ্রাম এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, সোমবার নিজ ঘর থেকে মিনাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুলিশকে জানান। এরই মধ্যে মিনার মরদেহটি হাসপাতালের সিঁড়ির নিচে রেখে তার স্বামী শামীম রেজা ও শাশুড়ি সুফিয়াসহ পরিবারের অন্য লোকেরা পালিয়ে যান।

নিহতের বাবা আব্দুল মজিদ বলেন, দুপুর ১২টার দিকে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানতে পারি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার সূত্র ধরে আমার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে তারা হাসপাতালে আমার মেয়ের মরদেহ রেখে পালিয়ে গেছে। আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। কিন্তু এখন আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবে মিনার বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের সময় যৌতুকও দেওয়া হয়। কিন্তু অল্প কয়েক মাস মধ্যে আরও যৌতুকের দাবিতে মিনার উপর নির্যাতন শুরু হয়। এমনকি মিনাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ৩-৪ মাস আগে দুই পরিবারের সমঝোতার ভিত্তিতে মিনাকে স্বামীর বাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু দুই পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

মিনার স্বামী ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে সোমবার বিকেলে মালিগ্রামে যাওয়া হয়। বাড়ির সব ঘরগুলো তালা দিয়ে উঠানের মাঝে বসে বিলাপ করছেন গৃহবধূর শাশুড়ি সুফিয়া বেগম। নিহতের স্বামী শামীম রেজা ভাঙা পায়ের চিকিৎসার নামে আত্মগোপনে রয়েছেন। নিহতের দুই বছর বয়সের শিশু শাম্মিকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

সুফিয়া বেগম বলেন, ইলেকট্রিক জাগে পানি গরম করা নিয়ে শামীমের সঙ্গে মিনার বাগবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার সূত্র ধরে মিনা তার শোবার ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে ভিন্ন রাস্তায় ঘরে ঢুকে মিনাকে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। মরদেহ ফেলে পালিয়ে যাওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিনাকে উদ্ধার করতে গিয়ে শামীমের একটি পা ভেঙে গেছে। ছেলের চিকিৎসার জন্য আমরা বাড়ি ফিরে এসেছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ট্রফি কুণ্ডু জানান, গৃহবধূকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তবে পরিবারের লোকেরা জানিয়েছিল গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

হাসপাতালে উপস্থিত খোকসা থানার এসআই বিপুল বলেন, নিহত গৃহবধূর গলায় দড়ির দাগ রয়েছে। তবে শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের তেমন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করা হবে।

আল-মামুন সাগর/জেএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।