দরিদ্রদের অনুদানের তালিকায় জনপ্রতিনিধি-সন্তান-স্বজনদের নাম!
অসহায় ও দুস্থ পরিবার এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের এককালীন আর্থিক সহায়তার তালিকায় জনপ্রতিনিধি ও তাদের স্বজনদের নাম পাওয়া গেছে।
জাতীয় সমাজসেবা দিবস উপলক্ষে সােমবার (২ জানুয়ারি) রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলায় এই আর্থিক সহায়তার মােট ১১ লাখ ৬২ হাজার নগদ টাকা বিতরণ করা হয়।
সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তিন হাজার ৫০০ টাকা হারে মােট ৩৩২ ব্যক্তির মাঝে অনুদানের এই অর্থ বিতরণ করা হয়। অনুদানের এই নগদ অর্থ ১৬৬টি গরিব, অসহায় ও দুস্থ পরিবার এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত দরিদ্র ১৬৬ জন শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করার নিয়ম থাকলেও তা মানেননি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তালিকায় নিজেদের ছেলে-মেয়ে ও স্বজনদের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের নামের তালিকায় দ্বিতীয় নম্বর ক্রমিকে আছে নাইমা আক্তার ঝর্ণা নামের এক কলেজছাত্রীর নাম। তিনি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য আছমা বেগমের মেয়ে। তালিকায় প্রথমে থাকা লংগদু সরকারি মডেল কলেজের শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার সদস্য আছমা বেগমের ছােট বােন। ১০৩ নম্বর ক্রমিকে থাকা মাহফুজ সরকার লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকারের ভাতিজা।
তালিকায় ৯৪ নম্বর ক্রমিকে মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য রানী বেগম ও ৮ নম্বরে সাবেক সদস্য সুফিয়া বেগমের নাম রয়েছে। এছাড়া তালিকায় ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর ক্রমিকে থাকা জান্নাতুল ফেরদৌস, শামসুল আলম ও ওমর ফারুক জেলা পরিষদ সদস্য আছমা বেগমের নিকটাত্মীয়।
৬৪ নম্বর ক্রমিকে থাকা নুর নাহার বেগম জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুর রহিমের মেয়ে এবং যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলামের স্ত্রী। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্করের স্ত্রীর নাম রয়েছে তালিকার ৯৩ নম্বরে।
অনুদানপ্রাপ্তদের তালিকায় মেয়ে, বোন ও আত্মীয়দের নাম থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জেলা পরিষদের সদস্য আছমা বেগম বলেন, ‘আমি দুইটা পরিবার দেখাশোনা করি। তারা খুবই দরিদ্র। তাদের বাচ্চারা স্কুলে পড়ে বলে তারা এ সুবিধা পাচ্ছে না। সেজন্য আমি, আমার মেয়ে ও বোনের নাম দিয়ে টাকাটা তাদের তুলে দিয়েছি।’

অন্য আত্মীয়দের নাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি জেলা পরিষদের সদস্য, আমার আত্মীয়-স্বজনরা তো না। তারা খুবই দরিদ্র তাই তারা পেয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে আছমা বেগম বলেন, ‘কারা কী নাম দিয়েছে আমি তো জানি না। আমি আমার নামগুলো দিয়েছি। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় তারা তাদের নামগুলো দেয়। এখন কারা কার নাম দিয়েছে আমি তো বলতে পারবো না।’
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জয়াস চাকমা বলেন, অনুদানের অর্থ বিতরণের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের দুজন সদস্য ৬০ শতাংশ এবং উপজেলা সমাজ কল্যাণ কমিটি ৪০ শতাংশ নাম সংগ্রহ করে তালিকা প্রণয়ন করেন। এজন্য শুধু সমাজসেবা কার্যালয় বা উপজেলা সমাজকল্যাণ কমিটির একার পক্ষে যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না।
সাইফুল উদ্দীন/এসআর/এএসএম