ভরা মৌসুমেও পশ্চিম সুন্দরবনে পর্যটকের খরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ১২:৫৯ পিএম, ০৭ জানুয়ারি ২০২৩

পর্যটনের ভরা মৌসুমেও পশ্চিম সুন্দরবনে কাঙ্ক্ষিত পর্যটক আসছে না। এজন্য বনবিভাগের অতিরিক্ত ভ্রমণকর নির্ধারণ ও জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন ট্যুর অপারেটররা। সুন্দরবনে পর্যটক কমে যাওয়ায় এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা পার করছেন অলস সময়। এতে একদিকে ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ ও ট্রলারের মালিকরা লোকসানে পড়ছেন, অন্যদিকে কমেছে বনবিভাগের রাজস্ব আদায়।

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে ভ্রমণের ভরা মৌসুম চলছে এখন। করোনা মহামারির আগে এ সময়ে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকত সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলো। তবে এবছর চিত্র ভিন্ন।

সাতক্ষীরা রেঞ্জ হয়ে সুন্দরবন দেখতে আসা পর্যটকরা কলাগাছিয়া, দোবেকি, মান্দারবাড়িরা সমুদ্র সৈকত, দুবলার চর এবং হিরোনপয়েন্ট এলাকা ভ্রমণ করে থাকেন। এরমধ্যে কলাগাছিয়ায় ভ্রমণে গিয়ে একদিনের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। এছাড়া অন্য চারটি স্থানে ভ্রমণ করতে হলে আগে থেকে বন বিভাগের কাছে অনুমতি নিতে হয়। তবে সুন্দরবনের এসব পর্যটন স্পটগুলোতে ঘোরার জন্য পর্যটকবান্ধব অবকাঠামো, আবাসিক ব্যবস্থা ও খাবার হোটেল না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় পর্যটদের।

মুন্সিগঞ্জের ট্যুর ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেন উকিল জাগো নিউজকে বলেন, পর্যটক কমে যাওয়ায় পর্যটনের লঞ্চ ও ট্রলারের সঙ্গে জড়িতরা এখন বেকার বসে আছেন। একই সঙ্গে মালিকরা বিনিয়োগ করে লোকসান দিচ্ছেন। এখান থেকে বনবিভাগ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য হঠাৎ করে রাজস্ব বৃদ্ধি ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করেন তিনি।

ট্রলার মালিক মো. মনিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আগে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের বাইরে জনপ্রতি পর্যটকের প্রতিদিনের রাজস্ব ছিল ৭০ টাকা, সেটি বর্তমানে করা হয়েছে ১৫০ টাকা। এছাড়া অভয়ারণ্য এলাকায় ১৫০ টাকার পরিবর্তে বর্তমানে করা হয়েছে ৩০০টাকা। বিদেশি পর্যটকদের দিতে হবে দিনপ্রতি ৩ হাজার টাকা। একইভাবে সব ধরনের নৌযান, লঞ্চ ও ট্রলারের ফি দ্বিগুণ-তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে আমাদের খরচ বেড়েছে। ট্যুর প্যাকেজের মূল্যও বৃদ্ধি করা হয়েছে।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন সাতক্ষীরার সভাপতি কে এম আনিছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সুন্দরবনে তেমন পর্যটক আসছেন না। আমাদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই সুন্দরবন বিভাগ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আকস্মিকভাবে সুন্দরবন ভ্রমণের রাজস্ব ফি দ্বিগুণ-তিনগুণ বৃদ্ধি করেছে। এজন্য সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকদের খরচও আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। এজন্য কেউ সুন্দরবন ভ্রমণে আগ্রহী হচ্ছেন না।

তিনি বলেন, পশ্চিম সুন্দরবনে তিনদিন দুই রাত ভ্রমণের জন্য ইকোনমি প্যাকেজে জনপ্রতি খরচ এখন সাত হাজার টাকা যা আগে ছিল ৪ থেকে ৫ হাজার। ডিলাক্স প্যাকেজে এখন জনপ্রতি ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার নিতে হচ্ছে। আগে ছিল ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। এছাড়া একদিনের জন্য যারা সুন্দরবন ভ্রমণে আসেন, তাদের জন্য ট্রলার অনুযায়ী দৈনিক ভাড়া ছিল দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। বর্তমানে করা হয়েছে ৩ হাজার ৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

তিনি বলেন, বর্তমানে ছোট নৌযানের নিয়মিত ভাড়া থাকলেও বড় নৌযানগুলোর বুকিং অর্ধেকেরও কম। ফলে ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

তবে বনবিভাগের মুন্সিগঞ্জ টহল ফাঁড়ির স্টেশন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সুন্দরবনে অন্যবারের তুলনায় পর্যটক সংখ্যা কিছুটা কম। শীত কমলে পর্যটক বাড়বে। পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে কলাগাছিয়াসহ পশ্চিম সুন্দরবনের ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে কিছু অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোসিন হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জ হয়ে পর্যটক কমেনি। তবে সাতক্ষীরা রেঞ্জে পর্যটক কম যাচ্ছে। সুন্দরবনে তিনদিনের ভ্রমণ কমলেও খুলনার করমজল ও সাতক্ষীরার কলাগাছিয়ায় পর্যটকরা একদিনের জন্য বেশি ভ্রমণ করছে।

পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে অবকাঠামো নির্মাণসহ বেশকিছু প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবনে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করেন তিনি।

আহসানুর রহমান রাজীব/এমএইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।