কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত চুয়াডাঙ্গা
উত্তরের হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীতে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা। টানা দুদিন এ জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতে কষ্টে আছেন খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। সময় মতো কাজে যেতে পারছেন না তারা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে এসব মানুষকে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এছাড়া শুক্রবারও এ জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আরও এক-দুদিন এ তাপমাত্রা ও তীব্র শীত অব্যাহত থাকতে পারে।
পৌষের শেষদিকে কনকনে শীত আর ঠান্ডা বাতাসে নেমে এসেছে স্থবিরতা। যার কারণে এ জেলার ছিন্নমূল মানুষের রাত কাটে এখন অসহনীয় দুর্ভোগে। শীতের একেকটি রাত যেন তাদের কাছে দুঃস্বপ্ন। প্রাকৃতিক এই বৈরিতা থেকে বাঁচতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সাহায্যের আবেদন অসহায় মুখগুলোর।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার শান্তিপাড়ার বাসিন্দা শুকুর আলী বলেন, ‘ঠান্ডার কারণে দুদিন রিকশা নিয়ে বের হইনি। জমানো তেমন টাকাও নেই, তাই আজ নিরুপায় হয়ে কাজে বের হয়েছি।’
চুয়াডাঙ্গা সদরের শরিষাডাঙ্গা গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব জবেদা খাতুন কম্বল না পাওয়ার আক্ষেপ জানিয়ে বলেন, ‘এরাম শীতেও কম্বল পাইনি। জাড়ে (ঠান্ডা) মরে যাওয়ার মতো অবস্থা। কেউ যদি একটা কম্বল দিতো, খুব ভালো ইইতো।’
রমজান আলী নামের এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলেন, ‘কিছুতো দেখি না, তবে খুব শীত লাগছে। সোয়েটার দুটো গায়ে দিয়েছি।’
চুয়াডাঙ্গা শহরের ফল বিক্রেতার সেলিম বলেন, বিক্রি একেবারে নেই। এই শীতে শুধু দোকান খুলে বসে থাকা আর কি। জিনিসপত্রের যে দাম সংসার চালাতে এই তীব্র শীতকে উপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এদিকে বেসরকারি চাকরিজীবী শারমিন মালিক বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুরের উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। কিন্তু এই শীতে অফিসে টাইমের মধ্যে পৌঁছাতে পারবো না। কারণ বাসের সেই ফার্স্ট টিপ এখনো ছাড়েনি।’
এদিকে তীব্র শীত আর একটানা কুয়াশার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধারা। প্রতিনিয়তই সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
শিশু ওয়ার্ডে ২২ মাস বয়সী মেয়েকে ভর্তি করেছেন রিক্তা খাতুন। নিজেরও ঠান্ডা লেগেছে জানিয়ে রিক্তা জানালেন, এক সপ্তাহ ধরে তার বাচ্চার জ্বর, সর্দি। স্থানীয়ভাবে গ্রাম্য ডাক্তার দেখিয়ে বাচ্চা সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে দুদিন হলো ভর্তি করেছেন। কিন্তু তীব্র শীতে বাচ্চা নিয়ে হাসপাতালে এসে তিনি নিজেই রোগে পড়ছেন বলে জানান।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র স্টাফ রেবেকা সুলতানা বলেন, সাধারণত ২০-৩০ জন রোগী ভর্তি থাকে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে প্রতিদিন ৪৫-৫০ জন রোগী ভর্তি থাকছেন। এসব শিশু জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। সেবা দিতে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে রোগীর চাপ বেড়েছ। প্রতিদিন তিনশ সাড়ে তিনশ শিশু শুধু আউটডোরেই চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়া ভর্তি আছে হাসপাতালে বরাদ্দকৃত বেডের তিনগুণ ও শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওরিয়ার রহমান জানান, ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। এই শীতে আসলে সবাইকে একটু সতর্কভাবে চললে শীতজনিত রোগ-বালাই থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আমরা এ যাবত ২৪ হাজারের বেশি কম্বল বিতরণ করেছি। আরো ৩২ হাজার কম্বল বিতরণের কার্যক্রম চলমান। এছাড়া আমি জেলার বিত্তবানদেরকে নিজে অনুরোধ করেছি শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এরইমধ্যে অনেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে জেনেছি। তাছাড়া জেলার সব সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে আমি বসেছি এবং তাদেরকেও শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ জানিয়েছি। তারাও ১০ হাজারের বেশি কম্বল বিতরণ করেছে। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে শীতবস্ত্র ও আর্থিক অনুদান সাধ্যমতো দিচ্ছি।
এফএ/জেআইএম