নকল সোনা দেখিয়ে নারীর গহনা লুট, ধরা খেয়ে দায় স্বীকার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ০৫:৫৮ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২৩

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় নকল সোনা দেখিয়ে খাদিজা নামের এক নারীর গহনা লুটে নিয়েছে একটি চক্র। এর মূল হোতা আবদুস শহিদ ও মো. মাকুসদ। তারা নিজেরাও প্রতারণার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

অভিযুক্ত মাকসুদ পশ্চিম মান্দারী গ্রামের নুর আলমের ছেলে ও শহীদ পার্শ্ববর্তী লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী গ্রামের গোফরান মিয়ার ছেলে।

ভুক্তভোগী খাদিজা জানান, ২৮ ডিসেম্বর সকালে পশ্চিম মান্দারী গ্রামে বাবাবাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন খাদিজা। মাকসুদের সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন তিনি। সিএনজিতে মাকসুদ ছাড়া আরও দুজন লোক ছিলেন। কিছুদূর গেলেই বারবার অটোরিকশা থামান চালক। লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের ভবানীগঞ্জ চৌরাস্তা এলাকায় গেলে হঠাৎ অটোরিকশা বন্ধ হয়ে যায়। ভেতরে থাকা ১৫ বছরের এক কিশোর রাস্তায় নামতেই একটি সোনার বার পান। সেখানে একটি ম্যামোসহ চিরকুট ছিল। চিরকুটটি পড়ার জন্য খাদিজাকে দেওয়া হয়। পড়ে খাদিজার কাছে মনে হয়, গহনা বানানোর উদ্দেশ্যে কেউ একজন সোনার বারটি একটি স্বর্ণকারের দোকানে নেওয়ার সময় পড়ে যায়।

খাদিজা আরও জানান, এরপর সোনার বারটি কেনার জন্য বিভিন্নভাবে তাকে বোঝানো হয়। টাকা নেই বললেও তাদের বায়না শেষ হয় না। একপর্যায়ে একই সড়কের তোরাবগঞ্জ এলাকায় গেলে সোনার বার চোখের সামনে ধরলে খাদিজার চিন্তাশক্তি লোপ পায়। এরপর সোনার বারটি হাতে দিয়ে তার কানের দুল ও গলার চেন নিয়ে প্রতারক চক্র অটোরিকশা নিয়ে সটকে পড়ে। পরদিন স্থানীয় একটি স্বর্ণকারের দোকানে গেলে জানা যায়, বারটি তামার। এরপরই খাদিজা তার ভাইকে বিষয়টি জানান।

আবদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশেই প্রতারক চক্রের লোকজনের অবস্থান। খাদিজার থেকে ঘটনাটি শোনার পর আমি আঁচ করতে পারি। পরে জিজ্ঞাসাবাদে মাকসুদ ও শহীদ বিষয়টি স্বীকার করেন।’

লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী গ্রামের বেলাল হোসেন বলেন, ‘মাকসুদ ও শহিদ গ্রুপের লোকজন নকল সোনার বার দেখিয়ে প্রতারণা করে আমার মায়ের সাত আনা গহনা নিয়ে যায়। পরে তাদের কাছ থেকে সোনার বিনিময়ে টাকা আদায় করি।’

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে ৩ দিন ধরে নিখোঁজ স্কুলছাত্র রিহান 

মান্দারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মনির পাটওয়ারী, স্থানীয় বাসিন্দা মফিজ উল্যা পাটওয়ারী ও প্রকৌশলী ইমরান হোসেন রাশেদ জানান, মাকসুদ ও শহীদ মলম পার্টির মতো একটি প্রতারক চক্রের মূল হোতা। তাদের কাজই প্রতারণা করে মানুষের সোনা ও টাকা লুটে নেওয়া। খাদিজার সঙ্গেও তারা একই ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রতিবেশীদেরও তারা ছাড়ে না। বিশেষ করে প্রবাসীদের স্ত্রীদের বেশি টার্গেট করেন তারা।

বক্তব্য জানতে বাড়ি গিয়ে মাকসুদ ও শহিদকে পাওয়া যায়নি। তবে দুজনই মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, তারা ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সোনার পরিবর্তে টাকা ফেরত দেবেন বলে জানিয়েছেন। এরই মধ্যে ৪০ হাজার টাকা তারা ফেরত দিয়েছেন। বাকি টাকা শিগগির দিয়ে দেবেন। দীর্ঘদিন ধরেই তারা এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন তারা ভালো হয়ে গেছেন।

আরও পড়ুন: টাকার ভাগ নিয়ে বাগবিতণ্ডায় ধরা পড়লো জোড়া খুনের ৬ আসামি 

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাকির হোসেন সুজন জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। পরে উভয়পক্ষ ঘটনাটি সমাধান করেছে বলে জেনেছি।

মান্দারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রুবেল পাটওয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাটি আমাকে জানানো হয়েছে। ভুক্তভোগীদের আইনগত সহায়তা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল।

লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, আমি নিজেই ওই এলাকায় যাবো। সেখানে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাজল কায়েস/এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।