কক্সবাজারে পানির স্তর নামছে : বিপাকে পর্যটন ব্যবসায়ীরা
গত কয়েক বছরের ব্যবধানে কক্সবাজার সাগরপাড়ের কলাতলী এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ১০ থেকে ১৫ ফুট নীচে নেমেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পর্যটক ও স্থানীয়দের অতিরিক্ত চাপের প্রভাবে এমনটি ঘটছে বলে ধারণা করছেন বোদ্ধা মহল।
এদিকে মাটির নীচে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সৈতক এলাকার ৩ শতাধিক হোটেল-মোটেল। নষ্ট হয়ে গেছে অসংখ্য পানির পাম্প। আসছে মার্চ-এপ্রিল মাসের তীব্র গরমে পরিস্থিতির আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার শহরের কলাতলীস্থ নিটল বে রির্সোটের ব্যবস্থাপক মো. নুরুল আবছার জানান, গত ২১ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করে হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় পানির সঙ্কট দেখা দেয়। ওইদিন থেকে অনেক হোটেলে মোটর পাম্প দিয়ে পানি না ওঠায় পানীয় জল সরবরাহ নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের দুটি পানির পাম্পও নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন হোটেলটির পরিচালক আবদুল কাদের মিশু। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসায়ীরা।
হোটেল মালিকরা জানান, কলাতলীতে সুপেয় পানির স্তর ১০ থেকে ১৫ ফুট নীচে নেমে গেছে। আগে যেখানে ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরে নল ঢুকালেই পানি ওঠানো যেত, সেখানে এখন প্রায় ৩০ ফুট নীচেও সুপেয় পানি পাওয়া দুষ্কর হচ্ছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, কলাতলীতে ভূগর্ভের পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় অনেক মোটর পাম্প অকেজো হয়ে পড়েছে। ক্রমান্বয়ে পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছে হোটেল মালিকরা।
জানা যায়, কক্সবাজার সাগরপাড়ের কলাতলী এলাকায় ৩ শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেল মাটির নীচে নলকূপ বসিয়ে পাম্প দিয়ে পানি উত্তোলন করে থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় গত রমাজানের পর থেকে কক্সবাজারে পর্যটক আগমন অন্য সময়ের চেয়ে বেড়েছে। যা ক্রমেই ঊর্ধ্বমূখী। পর্যটক ও স্থানীয় অধিবাসীদের অতিরিক্ত চাপের প্রভাব পড়ে মাটির নীচের সুপেয় পানির স্তরে। এ কারণে কলাতলী গ্রাম ও দরিয়ানগর বড়ছড়া গ্রামের নলকূপেও পানি উঠছে না।
কক্সবাজার পৌরসভার স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও নারী কাউন্সিলর মঞ্জুমন নাহার বলেন, এটা আমাদের জন্য অশনি সংকেত। এখনি প্রস্তুতি না নিলে আগামীতে সুপেয় পানির সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে খোলা জায়গা ও জলাধার কমে যাওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরে অতিরিক্ত চাপের কারণে এই সঙ্কট বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, সরকার যদি পানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সাগর থেকে দূষণমুক্ত পানি উত্তোলন ও প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলো সংরক্ষণে এখনি উদ্যোগ না নেয়, তাহলে সামনে কঠিন বিপদ অপেক্ষা করছে।
এবিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, কলাতলীতে অপরিকল্পিতভাবে বোম-মোটর সংযুক্ত গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী দেড় হাজার থেকে দুই হাজার ফুট দূরত্বের মধ্যে একেকটি গভীর নলকূপ স্থাপনের কথা। কিন্তু হোটেল মালিকরা মাত্র ৫০ ফুটের মধ্যেই একাধিক নলকূপ বসিয়েছে। এছাড়া নির্বিচারে গাছপালা ধ্বংস করা ও ব্যাপকভাবে পাহাড় কাটার কারণে এ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে তিনিও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি সত্যি উদ্বেগজনক। আমরা এবিষয়ে করণীয় নির্ধারণে শিগগিরই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসবো।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমএএস/আরআইপি