দুর্যোগ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রামুর নারকেল বাগান


প্রকাশিত: ০১:০৮ পিএম, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দেশের বৃহত্তম আইসোলেটেড নারকেল বীজ বাগান দীর্ঘদিন পর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। দুর্যোগ কাটিয়ে আবারো পথচলা সচল হওয়া কক্সবাজারের রামুর এ বাগানে এবার যোগ হয়েছে ‘অপিওয়ান বাইট’নামের নতুন প্রজাতির চারা। নতুন প্রজাতির এ নারকেল গাছ মাত্র ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে ফলন দেবে। কিন্তু সচরাচর নারকেল গাছ ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ফলন দেয়। এ ছাড়া নতুন জাতের গাছটি দেশের উপকূলীয় এলাকার জন্য যুগোপযোগী।

সাম্প্রতিক সময়ে ভিয়েতনাম থেকে ‘অপিওয়ান বাইট’ নামের এ নারকেল চারা দেশে আমদানি করা হয়েছে।

সূত্র মতে, বাগানটি পুরোপুরি উৎপাদনে আসলে উৎপাদিত নারকেলের চারা ও বীজ দিয়ে সারাদেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি বীজ এবং নারকেল বিক্রি করে বছরে রাজস্ব আয় সম্ভব হবে কোটি টাকার উপরে। তবে এর জন্য অর্থ ও জনবল সঙ্কট কমিয়ে আনতে হবে। বন্ধ করতে হবে বন্যহাতির উৎপাত এমনটি উল্লেখ করেছে সূত্রটি।
 
বিষয়টি নিশ্চিত করে রামু আইসোলেটেড নারকেল বীজ বাগানের উপ-পরিচালক শৈবাল কান্তি নন্দি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেকটা হুমকিতে থাকা দেশের উপকূলীয় এলাকা রক্ষা এবং কক্সবাজার সৈকত তীরের জন্য যুগোপযোগী ‘অপিওয়ান বাইট’ নামের নতুন প্রজাতির নারকেল চারার নার্সারির কাজ চলতি বছর থেকে শুরু করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সমন্বিত মান সম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে বাগানে প্রায় ১৫ হাজার রানিং ফুট সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। তিন হাজার পুরনো গাছের সঙ্গে গত কয়েক বছরে নতুন করে আরো ১৫ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ফলের মাতৃবাগান। বর্তমানে এ বাগান থেকে বছরে ৯০ থেকে এক লাখ নারকেল এবং ১৬ থেকে ২০ হাজার চারা উৎপাদন হচ্ছে।

শৈবাল কান্তি নন্দি আরো জানান, বাগানটি পুরোপুরি উৎপাদনে আসলে এ বাগানে উৎপাদিত নারকেলের চারা ও বীজ দিয়ে সারাদেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি বীজ এবং নারকেল বিক্রি করে বছরে রাজস্ব আয় সম্ভব হবে কোটি টাকার উপরে। তবে এর জন্য অর্থ ও জনবল সঙ্কট কমিয়ে আনতে হবে। বন্ধ করতে হবে বন্য হাতির উৎপাত এমনটি উল্লেখ করেন তিনি।

Narkel-Bagan

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারাদেশে উন্নত জাতের নারকেল বীজ সরবরাহের লক্ষে ১৯৮২ সালে রামু উপজেলার রাজারকুলে ২৫০ একর জমির উপর আইসোলেটেড নারকেল বীজ বাগান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং ইউএনডিপির সহায়তায় প্রাথমিকভাবে এ বাগানে শ্রীলংকান টল ও মালয়েশিয়ান ডোয়ার্প জাতের ১৪ হাজার চারা লাগানো হয়। কিন্তু উৎপাদনে আসতে না আসতেই ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে বাগানটি। নষ্ট হয়ে যায় বাগানের বেশিরভাগ গাছ। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ থাকায়, অর্থাভাবে সম্ভাবনাময়ী এ বাগান পরিত্যক্ত বাগানে পরিণত হয়। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার এ বাগানটিকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিলে বর্তমানে বাগানটি আবার প্রাণ ফিরে পায়।

বাগানের নার্সারি তত্ত্বাবধায়ক মো. খোরশেদ আলম জানান, মূলত ২৫০ একর জমির মধ্যে ১০ একর নার্সারি আর ১৮৪ একর নারকেলের মাতৃ বাগান রয়েছে। বর্তমানে মাতৃবাগানের অভ্যন্তরে খালি জায়গায় সাথী ফসল হিসেবে উন্নত জাতের লেবু, আম, কমলা, মালটা, লিচু, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের মাতৃ বাগানও করা হয়েছে।
 
তিনি আরো বলেন, এ প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে আগামীতে এ বাগানের নারকেল চারার পাশাপাশি উন্নত জাতের বিভিন্ন ফলের চারা কলমও সারাদেশে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

বাগানের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকতা মো.জসীম উদ্দিন জানান, গাছ থেকে নারকেল বীজ সংগ্রহ করার পর সেগুলোকে বাছাই করা হয়। যেগুলো বীজের উপযুক্ত সেগুলো বসানো হয় নার্সারিতে। নার্সারিতে বসানোর ১০ থেকে ১১ মাসের মধ্যে চারায় পরিণত হয়।
 
তিনি বলেন, বাগানের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন কারা গেলে প্রতিবছর এ বাগান থেকে ১২ থেকে ১৫ লক্ষ উন্নত জাতের নারকেল চারা উৎপাদন সম্ভব হবে। বাগানে উৎপাদিত উন্নত জাতের নারকেল চারা বর্তমানে সারাদেশের কৃষক এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নার্সারিতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।