টাঙ্গাইল মাইক্রোবাস মালিক সমিতি
নতুন কমিটির খবর জানেন না সভাপতি-সম্পাদক
টাঙ্গাইল জেলা মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ মালিক ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদককে না জানিয়ে নতুন কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। পূর্বঘোষণা ছাড়াই গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পৌর মেয়রের হস্তক্ষেপে নতুন ওই কমিটি গঠন হয়।
নবগঠিত কমিটিতে হাফিজুর রহমান মাসউদকে সভাপতি আর মো. সোহেল রানাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও সাধারণ সভার মাধ্যমে ওইদিন সন্ধ্যায় জেলা কার্যালয় প্রাঙ্গণে নতুন কমিটি গঠন হয়েছে বলে দাবি করেছেন সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক।
জানা যায়, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় টাঙ্গাইল জেলা মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ মালিক ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতি। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ২৩০ জন। এরমধ্যে অনেকে গাড়ি বিক্রি করে সমিতি থেকে চলে গেছেন। ২০০৯ সালে সর্বশেষ সংগঠনটির কমিটি গঠন করা হয়। টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সামনে অস্থায়ীভাবে চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম।
নবগঠিত কমিটির সভাপতি ও সাবেক সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান মাসউদ বলেন, সমিতির টাকা তছরুপ করেছেন সাধারণ সম্পাদক রিপন। তার একক নেতৃত্বে এতদিন পরিচালিত হয়েছে সংগঠনটি। দীর্ঘদিন নেতৃত্বে থাকলেও হয়নি সমিতির একটি সাধারণ সভা। আমি এবারই প্রথম সাধারণ সভার আয়োজন করি। সাধারণ সভায় তছরুপকৃত টাকার হিসাব দিতে পারবেন না বলেই সম্পাদক সভায় উপস্থিত হননি।
এদিকে সাধারণ সভার কোনো চিঠি বা দাওয়াতপত্র দেওয়া হয়নি বলে জানিয়ে আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিপন বলেন, সমিতির সাধারণ সভা করবেন সভাপতি-সম্পাদক। কোন নিয়মে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটি অবগত নন তিনি। এমনকি কমিটির কোনো সদস্য বা সাধারণ মালিকরা কেউ এ সভার বিষয়ে জানতেন না। রাতের আঁধারে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আর স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নবগঠিত কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রতিমাসে একশ’ টাকা করে মালিকদের কাছ থেকে নিয়ে সেই টাকা দিয়ে সমিতির ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও অফিসের সব আসবাবপত্র এবং সব ধরনের খরচ মেটানো হয়েছে ওই টাকা দিয়েই।
অপরদিকে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে জানিয়েছেন জেলা মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ মালিক ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি প্রশান্ত পাল। এছাড়াও গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের সাধারণ সভার বিষয়েও ওয়াকিবহাল ছিলেন না তিনি। এখনও তিনি গাড়ির মালিক আছেন বলেও জানান।
কমিটির কার্যকরী সভাপতি কাজী একরামুল হক টিটু বলেন, নতুন ঘোষিত সভাপতি আমাকে সাধারণ সভার কথা জানালেও কমিটি গঠনের বিষয়টি জানতেন না তিনি। এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন না তিনি। পৌর মেয়র আর কয়েকজন কাউন্সিলর মিলে নতুন ওই কমিটি গঠন করেন।
জেলা মাইক্রোবাস শ্রমিক সমিতির সভাপতি সানোয়ার হোসেন খান ছানা বলেন, টাঙ্গাইল জেলা বাস কোচ মিনিবাস শ্রমিক সমিতির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় জেলা মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ মালিক ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির রেজিস্ট্রেশন নেই। এরপরও সংগঠনের বিধি বিধান না মেনে ও আমাদের না জানিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পৌর মেয়র সমিতির নতুন কমিটি গঠন করেছেন।
জেলা বাস কোচ মিনিবাস শ্রমিক সমিতির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হলেও সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদককে জানানো হয়নি নতুন কমিটি গঠনের কথা। এছাড়া ওই কমিটি গঠনের কার্যক্রমে তারাও ছিলেন না বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ৭৫ জন শ্রমিক জেলা মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ মালিক ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সদস্য। ওই ৭৫ জন শ্রমিক নিজের গাড়ি নিজেরাই চালান। নতুন কমিটি গঠন নিয়ে অসন্তোষ ওই শ্রমিক-মালিকরাও।
টাঙ্গাইল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্ত রঞ্জন সরকার বলেন, আগের কমিটির সহ-সভাপতি মৌখিকভাবে আমাদের সাধারণ সভার দাওয়াত দিয়েছিলেন। তবে ওই দাওয়াতে সংগঠনের সকল সদস্য উপস্থিত না থাকার কারণে আমি এবং আমার সংগঠনের সভাপতি সেখানে উপস্থিত হইনি। পরে জানতে পারি পৌর মেয়র সাহেব নতুন কমিটি গঠন করেছেন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, নতুন কমিটি গঠন নিয়ে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। নতুন কমিটিটিও গঠন করা হয়েছে আগের কমিটির সহ-সভাপতিতে সভাপতি করে। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার মতো কিছু হয়নি। কেননা সাধারণ সভা আর নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্ত রঞ্জন সরকার আর তৎকালীন কার্যকরী সভাপতি টিটুর সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে। তারা আমাদের সমর্থন দিয়েছেন।
এফএ/এএসএম