নেত্রকোনা সীমান্তে ফের বেড়েছে হাতির উপদ্রব
নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলায় সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকায় বেড়েছে বন্য হাতির উপদ্রব। হাতির হাত থেকে ক্ষেতের বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল রক্ষা করতে এসব গ্রামের লোকজন হতাহতের শিকার হচ্ছেন। সর্বশেষ ১১ এপ্রিল দুর্গাপুরের সীমান্তবর্তী ফারংপাড়া এলাকায় হাতির পাল তাড়াতে গিয়ে ওই গ্রামের কৃষক সাহেব আলী (৫২) আহত হন।
এর নভেম্বর ও ডিসেম্বরে হাতির আক্রমণে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ছয় জনের মতো। এ পর্যন্ত দুর্গাপুরে প্রায় কয়েক একর পাকা ধান ক্ষেত নষ্ট করেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান। এই তাণ্ডবের স্থায়ী সমাধান চান সীমান্তের বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে ফারাংপাড়া এলাকায় বোরো ধান খেতে বন্য হাতির দল হানা দেয়। দলে ছোটবড় প্রায় ২৫টির মতো হাতি ছিল। এ সময় স্থানীয়রা লাঠিসহ মশাল জ্বেলে হাতি তাড়াতে যান। এতে হাতির আক্রমণে ফারাংপাড়া গ্রামের কৃষক সাহেব আলী গুরুতর আহত হন। লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তানজিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, হাতির আক্রমণে আহত কৃষক সাহেব আলীর বায়ুপথে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠানো হয়।
স্থানীয় কৃষক নবী হোসেন, কার্তিক হাজং, জালাল মিয়া, তরিকুল ইসলাম, প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হৃদয় জানান, গত কয়েক বছর ধরেই হাতিগুলো ভারতীয় সীমান্ত পার হয়ে খাবারের সন্ধানে বাংলাদেশে নেমে আসে। পাঁচ মাস আগেও ভারতীয় হাতি দলবেঁধে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে প্রবেশ করে ফসল ও ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ওই সময় হাতি তাড়াতে গিয়ে গ্রামে এক আদিবাসী কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
ফারাংপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল মজিদ বলেন, হাতির তাণ্ডবে আমরা রীতিমতো অতিষ্ঠ। ক্ষুধার্ত হাতির পাল খাবারের খোঁজে সীমান্ত পার হয়ে আমরার ফসল ও বাড়িঘর ভাঙে। কখন কার ক্ষতি করে, আমরা হাতির আতঙ্কে আছি।
এলাকার কয়েকজন জানান, মাঝে মধ্যে হাতির পাল নেমে ক্ষেতের ধান খেয়ে ফেলে। এছাড়া শুঁড় ও পা দিয়ে মাড়িয়ে ফসলসহ ঘরবাড়ি বিনষ্ট করছে। হাতির ভয়ে তারা আতঙ্কে আছেন।
কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত গৃহিণী মনোয়ারা বেগম বলেন, ১২ জানুয়ারি রাতে হঠাৎ বন্য হাতির একটি দল আমার বাড়িতে আসে। হাতিগুলো বসতঘরের খুঁটি, বেড়া, ভেঙে তছনছ করে ফেলে। ঘরে থাকা ধান, চাল, হাঁড়ি-পাতিলসহ যাবতীয় আসবাবপত্র নষ্ট করে যায়। এসময় ঘরবাড়ি ফেলে তিন সন্তান নিয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যাই আমরা।
৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের বিজয়পুর সীমান্ত এলাকায় হাতির পাল নেমে আসে। এ সময় মশাল জ্বেলে হাতি তাড়াতে গিয়ে ওই গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষক বুনেশ রিছিল (৬২) নিহত হন। এ সময় তিনজন আহত হন। এর আগের মাসে ১৫ নভেম্বর রাতে কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের সন্ন্যাসীপাড়া গ্রামে হাতির আক্রমণে কৃষক নুরুল ইসলাম (৩৮) নিহত হন। আহত হন আরও চারজন।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল আহসান জাগো নিউজকে বলেন, সীমান্তে মাঝেমধ্যে হাতির উপদ্রব বেড়ে যায়। ক্ষুধার্ত হাতির পাল খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়।
এইচ এম কামাল/এসজে/জেআইএম