ঈশ্বরদীতে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি, গভীর নলকূপে ভিড়

শেখ মহসীন
শেখ মহসীন শেখ মহসীন ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
পানি জন্য অন্যের গভীর নলকূপে ভিড় করছেন মানুষ

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী তিন ইউনিয়ন পাকশী, সাঁড়া, লক্ষ্মীকুন্ডা ও পৌরশহরের বেশিরভাগ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ঈশ্বরদী পৌরসভার সাপ্লাই পানি সরবরাহও নিরবচ্ছিন্ন নয়। বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও লোডশেডিংয়ে পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী পানি পাচ্ছে না।

ঈশ্বরদী পৌরসভার ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত ফতেহমোহাম্মদপুর, পূর্ব-নূরমহল্লা, আমবাগান, আলহাজ্ব ক্যাম্প, মাহাতাব কলোনি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শতকরা ৯৫ শতাংশ বসতবাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। যাদের বাসা-বাড়িতে সাবমার্সেবল বা গভীর নলকূপ আছে শুধুমাত্র তারা সুপেয় পানি পাচ্ছেন।

পানির জন্য বেশিরভাগ মানুষকে মসজিদের গভীর নলকূপে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া এলাকার যে টিউবওয়েলে সামান্য পানি উঠছে সেখানে বালতি, কলসি, জগ হাতে নিয়ে মানুষ ভিড় করছেন।

পৌর শহরের ফতেহমোহাম্মদপুর নিউ কলোনি তিনতলা এলাকার বাসিন্দা খোকন হোসেন বলেন, বেশিরভাগ বাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। নিউ কলোনি মসজিদের সাবমার্সেবল থেকে এলাকার মানুষজন বাধ্য হয়ে বালতি-কলসি ভরে পানি নিচ্ছেন। এলাকার অনেক মানুষ দরিদ্র। তাদের পৌরসভার সাপ্লাই পানি নেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই তারা বাধ্য হয়ে মসজিদ থেকে পানি নিচ্ছে।

নূরমহল্লার এলাকার জামাল উদ্দিন বলেন, ১৫ দিন হলো টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। এখানে সরকারিভাবে গভীর নলকূপ নেই। তাই মানুষের বাসা-বাড়িতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের কষ্টের কথা জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই নিজেদের প্রয়োজনে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ধরনা দিতে হচ্ছে।

একই এলাকার মনোয়ারা বেগম বলেন, পানির জন্য খুবই কষ্টে আছি। বাড়ির পাশে একটি টিউবওয়েলে অল্প পরিমাণ পানি উঠছে। সেখানে পানি নিতে এসেছি। দেখতেই পাচ্ছেন এখানে অনেক ভিড়। আমার মতো সবাই পানির জন্য অপেক্ষা করছে। মেয়র ও কাউন্সিলের কাছে অনুরোধ জানাই দ্রুত যেন পানির ব্যবস্থা করেন। পানি সংকটের কারণে খুব কষ্ট হচ্ছে।

নূর মহল্লা এলাকার ফরিদা বেগম বলেন, টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। রোজার দিনে পানির জন্য কষ্ট করতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে বাড়িতে গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে।

এদিকে, তীব্র তাপপ্রবাহে ঈশ্বরদীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দু’সপ্তাহ ধরে এখানে তাপপ্রবাহ বইছে। রোববার ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। শনিবার (১৫ এপ্রিল) চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। চলমান তাপপ্রবাহ থেকে স্বস্তি পেতে কিশোর ও যুবকরা সেচের জমির গভীর নলকূপে গিয়ে গোসল করছেন। পাশাপাশি অনেকেই পুকুর ও নদীর পানিতেও নেমে স্বস্তি অনুভব করছেন।

পাকশী এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বলেন, পদ্মা নদীর তীরবর্তী পাকশীসহ বিভিন্ন গ্রামের টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। রোজার দিনে পানির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।

ঈশ্বরদী পৌরসভার পানি সরবরাহ শাখার সহকারী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার জাগো নিউজকে বলেন, পৌরসভায় ১১টি গভীর নলকূপ আছে। এরমধ্যে আটটি নলকূপ সচল আছে। বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না হলে আটটি নলকূপের মাধ্যমে পৌরবাসীর সাপ্লাই পানির চাহিদা পূরণ করা যায়। কিন্তু সম্প্রতি লোডশেডিংয়ের কারণে গভীর নলকূপগুলো মাঝেমধ্যেই চালানো সমস্যা হচ্ছে। এরপরও আমরা পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক রানা সরদার জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মা নদীতে পানি কমে গেছে। এতে তীরবর্তী গ্রামগুলোতে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ফলে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। কিন্তু সরকারিভাবে বসানো পাম্প ও গভীর নলকূপে পানি স্বাভাবিক আছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাহাবুব ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, পানির স্তর ৩০ ফুটের নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বৃষ্টিপাত হলে পানির স্তর স্বাভাবিক হবে। বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার কোনো সমাধান নাই।

ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা জাগো নিউজকে বলেন, টিউবওয়েলে পানি না ওঠার বিষয়টি শুনেছি। তবে যারা পৌরসভার সাপ্লাই পানি সংযোগ নিয়েছে তাদের কোনো সমস্যা নেই। পৌরসভার পানি সরবরাহের কোনো গাড়ি বা পরিবহন নেই। এরপরও পৌর পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে কোনো কিছু করণীয় আছে কি-না দেখবো।

এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।