গরম-লোডশেডিংয়ে ভারতীয় দুই বন্দির মরদেহ পচনের আশঙ্কা
তীব্র তাপপ্রবাহ ও বারবার লোডশেডিংয়ে ভারতীয় দুই নাগরিকের মরদেহ নিয়ে বিপাকে পড়েছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মরদেহ দুটি হস্তান্তর করতে না পেরে বিড়ম্বনায় ভুগছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে মরদেহ দুটি পচনের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তিনদিন আগে একজন ও এর আগে পদ্মা সেতু ব্রিজের ঢাল থেকে আটকের পর অনুপ্রবেশের অভিযোগে তারা শরীয়তপুর জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন গত ১৮ জানুয়ারি এবং আরেকজন ১৬ এপ্রিল রাতে মারা যান। তাদের মরদেহ সদর হাসপাতালের ফ্রিজিং সাপোর্ট ওয়ার্ডে রাখা হয়। তবে বেশ কিছুদিনের লোডশেডিংয়ে মরদেহ দুটি অক্ষত রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শরীয়তপুর জেলা কারাগার সূত্র জানায়, গত শনিবার রাতে জেলা কারাগারে থাকা বাবুল সিং (৩৮) গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে আনা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে রোববার ময়নাতদন্ত শেষে বাবুল সিংয়ের মরদেহ সদর হাসপাতালের ফ্রিজিং সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে ১৮ জানুয়ারি শরীয়তপুর জেলা কারাগারে ভারতীয় নাগরিক সত্যেন্দ্র কুমার (৪০) মারা যান। তিনি ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মাথুরা জেলার চেয়ারপুর এলাকায় বাসিন্দা। ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত এলাকা গোলচত্বর থেকে সেনা সদস্যরা তাকে আটক করেন। পরে বাংলাদেশ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা নিয়ে তাকে জেলা কারাগারে পাঠায় জাজিরা থানা পুলিশ। দীর্ঘদিন নানা রোগে ভুগে তিনি মারা যান। তার মরদেহও শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ফ্রিজিং সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
কারাগার সূত্র আরও জানায়, এ পর্যন্ত অনুপ্রবেশের অভিযোগে বিভিন্ন থানায় করা মামলায় ৪৬ জন ভারতীয় নাগরিক কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ জন নারী।
সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ হাসপাতালে কোনো হিমাগারের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালের নিচতলায় একটি কক্ষে একটি ফ্রিজে সর্বোচ্চ চারটি মরদেহ রাখা সম্ভব। এখন ওই ফ্রিজে দুটি রাখা হয়েছে। এদিকে হাসপাতালের জেনারেটর কম পাওয়ারের হওয়ায় ফ্রিজটিতে সংযোগ দেওয়া যায়নি। তারওপর আবার প্রচণ্ড গরম ও বারবার লোডসশেডিং হওয়ায় মরদেহে পচন ধরার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ড. আবদুস সোবাহান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৮ জানুয়ারিতে আমাদের হাসপাতালের ফ্রিজে এক ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ রাখেন জেল সুপার। গত শনিবারে আরও একটি মরদেহ রাখেন ফ্রিজে। মরদেহগুলো অক্ষত রাখতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এগুলো দ্রুত ঢাকায় নেওয়া হলে ভালো হয়।
জেল সুপারের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট আবদুর রহিম বলেন, মরদেহ দুটির ভবিষ্যৎ জানতে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। তবে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কোনো জবাব দেয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এখানেই রাখবো।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন গত ১৮ জানুয়ারি যে ভারতীয় মারা গেছেন তার মরদেহটিও কিন্তু এখনো সেখানেই রাখা আছে। হাসপাতালে মরদেহ রাখতে সরকারিভাবেই দৈনিক ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। তবে লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্রিজ বন্ধ থাকে, সে কারণে তারা চিন্তিত হতে পারেন। তবে এগুলো ঢাকায় রাখতে পারলে ভালো হতো। ভারত থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে মরদেহ ফেরত চাইলেই তা ফেরত দেওয়া হবে।
এম শাহাদাত হোসেন হিরু/ইএ