বগুড়ায় ক্লাস চলাকালে স্কুলমাঠে গণতন্ত্র মঞ্চের জনসভা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পিএম, ০৬ জুন ২০২৩

বগুড়ার শহীদ খোকন পার্কে স্থান নির্ধারণ করলে যুবলীগ সেখানে শান্তিসমাবেশের ঘোষণা দেয়। পরে মঙ্গলবার (৬ জুন) দুপুর ১২টার দিকে শহরের সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে ঢাকা-দিনাজপুর রোডমার্চের অংশ হিসেবে জনসভার আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। অভিযোগ উঠেছে, ক্লাস চলাকালেই ওই স্কুলমাঠে জনসভার আয়েজন করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেন, বিদ্যালয় মাঠে জনসমাবেশের সময় ক্লাস চলার বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। প্রথমে শহরের সাতমাথায় জনসমাবেশের আয়াজন করতে চাওয়া হয়। পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় পরে শহীদ খোকন পার্কে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানেও আমাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে পুলিশ সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠেই জনসমাবেশ করার সুযোগ দেয়। একরকম আমাদের বাধ্য করে এখানে নিয়ে আসা হয়। ওই বিদ্যালয়ের মাঠ ছাড়া অন্য কোথাও জনসমাবেশের বিকল্প পুলিশ আমাদের দেয়নি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বগুড়ার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ নিজেদের পচ্ছন্দের স্থানে জনসমাবেশ করেছে। পুলিশ তাদের বাঁধা বা পরামর্শ দেয়নি। বিদ্যালয় মাঠে স্কুল চলার সময় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তারা আয়োজন করেছে কি না জানা নেই।

বগুড়া সেন্ট্রাল হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আসাদুস জামান বলেন, শুনেছি বিরোধীদলের সমাবশে হচ্ছে। এ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না। কোনো অনুমতি ছাড়াই বিদ্যালয় মাঠে রাজনৈতিক আয়োজন দুঃখজনক। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় স্কুল ছুটি হয়। তবে আজ এরকম অবস্থা দেখে দুপুর ১টার দিকেই শিক্ষার্থীদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। সমাবেশ থেকে উচ্চ শব্দ বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমেরও ভেসে আসছিল।

জানা যায়, ঢাকা-দিনাজপুর রোডমার্চের অংশ হিসেবে ১৪ দফা দাবিতে বগুড়ায় জনসভার আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য দফাগুলো হলো, সরকারের পদত্যাগ, অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কার।

জনসমাবেশের জন্য গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে প্রথমে শহরের সাতমাথা ও পরে শহীদ খোকন পার্কে স্থান নির্ধারণ করা হয়। বগুড়া জেলা যুবলীগ একই স্থানে শান্তিসমাবেশের ঘোষণা দিলে শহরজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। পরে মঙ্গলবার দুপুরে সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে গণতন্ত্র মঞ্চের জনসভা ও আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে যুবলীগ শান্তিসমাবেশ আয়োজন করে।

বগুড়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু বলেন, দুইদিন আগেই পুলিশের কাছে শহীদ খোকন পার্কে শান্তিসমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। তবে অনুমতি না পাওয়ায় আমরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছি। কোনো পাল্টা কর্মসূচি আমরা দিইনি।

বগুড়া জেএসডি সভাপতি মনিরুজ্জামান বাচ্চুর সভাপতিত্বে গণতন্ত্র মঞ্চের জনসভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির বগুড়া শাখার সমন্বয়ক রেজাউল বারী।

জনসভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। তারা মুখেই শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের কথা বলে। এখনো তারা কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। কৃষকের পণ্য থেকে যারা মাঝখানের দালালি খায়, তারা সবাই ওই দলের লোক। লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের বাজারে আগে পাঁচ হাজার টাকায় ক্রয় করা দ্রব্য এখন ১০ হাজারেও কেনা সম্ভব হয় না।

তিনি বলেন, এই ১৫ বছরে সাধারণ মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি, উন্নয়ন হয়েছে শেখ হাসিনার স্বজনদের। শেখ হাসিনার উন্নয়ন টাকা পাচার ও লুটপাটের উন্নয়ন। আমেরিকার ভিসানীতিতে সব সমীকরণ বদলে যাচ্ছে। বগুড়ার পুলিশ সুপার আমাদের সাতমাথা, শহীদ খোকন পার্কে সমাবেশ করতে দেয়নি। গতকাল যুবলীগ আমাদের ওপর হামলা করে এখন শান্তিসমাবেশের নামে মাস্তানি করছে। আমাদের গাড়িবহরে এমনকি হোটেলে গিয়েও তারা হামলা করেছে। এর বিচার সময়মতো হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের এই জনসমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী ও বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বক্তব্য দেন।

এর আগে সোমবার বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলায় রোডমার্চের জনসমাবেশ শেষে ফেরার পথে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় বহরের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করাসহ সংগঠনটির ছয় নেতাকর্মী আহত হন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলার ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগ রয়েছে।

এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।