বরিশালে আ.লীগের বিদ্রোহীরা মাঠে, বিএনপিতে খানিকটা স্বস্তি


প্রকাশিত: ০৮:৪৪ পিএম, ১২ মার্চ ২০১৬

প্রথম দফা নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের ইউনিয়নগুলোতে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের শেষ ভরসা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে থাকলে নির্বাচন খানিকটা সুষ্ঠু হতে পারে বলে ধারণা বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের। ফলে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রর্থীদের মাঠে রাখার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে দলটি।

বিএনপি মনোনীতরা বলছেন, চারিদিকে যেভাবে নির্বাচনী সহিংসতা শুরু হয়েছে তাতে করে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এক্ষেত্রে খানিকটা সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের মাঠে ধরে রাখতে হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনীতরা যখন বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমাতে ব্যস্ত তখন বিএনপির প্রার্থীরা কিছুটা হলেও নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালানোর সুযোগ পাচ্ছেন। বিদ্রোহীরা মাঠে না থাকলে এতদিনে তাদের উপর হামলা-মামলা কয়েকগুণ বেড়ে যেতো। এলাকা ছেড়ে পালানো ছাড়া বিএনপি প্রার্থীদের গতি থাকতো না।

বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ২৭১ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে প্রথম ধাপে। বিভাগের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, এর মধ্যে অধিকাংশতেই রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। বেশিরভাগ ইউনিয়নে ত্যাগী নেতাদের বাদ নিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার অভিযোগ এনেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দলীয় নেতাদের উপর রাগ-ক্ষোভের অংশ হিসেবেই দলীয় মাঠ ছাড়েননি বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

অধিকাংশ ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা বিএনপির প্রার্থীদের নিয়ে ভাবছেন না। তারা বড় বাধা মনে করছেন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের।

জেলার উজিরপুর, বানারীপাড়া, মুলাদীতে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে আওয়ামী লীগে। উজিরপুরের জল্লায় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে আছেন পরপর দুইবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান উর্মীলা বাড়ৈ। এলাকায় প্রভাবও কোনো অংশে কম নয় তার।

জল্লার বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান জানান, উর্মীলা বাড়ৈ মাঠে থাকলে আমরা আশাবাদী। বিদ্রোহী প্রার্থী উর্মীলা বাড়ৈর শরীরে আওয়ামী লীগের রক্ত আছে। তাই তিনি যেভাবে প্রভাব খাটাতে পারবেন আমরা পারবো না। তাছাড়া ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বিদ্রোহী প্রার্থী উর্মীলাকেই ফ্যাক্টর মনে করছেন। নির্বাচনী মাঠে নিজেদের মধ্যে শক্তির লড়াই থাকাটা অবশ্যই আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক।

বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠিতে আওয়ামী লীগের চারজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এখানে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হাসান বালী। তিনি বলেন, জনগণ ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য উদগ্রীব। তারা একটি সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন চায়। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার কোনো লক্ষণ আপাতত নেই।

একই উপজেলার সদর ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী বাবুল হোসেন হাওলাদার। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আবুল কালাম আজাদ। বিএনপি প্রার্থী বাবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, বিদ্রোহীরা হলেন আওয়ামী লীগের এপিঠ-ওপিঠ। সুতরাং তাদের কারো দ্বারাই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী আব্দুল জলিল ঘরামী ও বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম ঘোষণা দিয়েছেন তাদের নিজ নিজ এলাকার কেন্দ্রগুলো দখলে নেবেন। এখানে আমাদের আর কী ভূমিকা থাকতে পারে সেটা আপনারাও (সাংবাদিক) বুঝতে পারছেন। তারপরেও আমি মনে করি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে থাকলে ভোট কিছুটা হলেও সুষ্ঠু হতে পারে।

পটুয়াখালীর বাউফলের আদাবাড়িয়ার আওয়ামী লীগের শক্ত বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন জাহাঙ্গীর উল্লাহ। সেখান থেকে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন শামসুল হক ফকির। ওই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন জসিম উদ্দিন হাওলাদার। জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহ প্রার্থী থাকায় তার অবস্থান অনেকটা মজবুত। এখন অপেক্ষা সুষ্ঠু নির্বাচনের।

ভোলায় তজুমুদ্দিনের চাষড়া ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন রিয়াদ হোসেন হান্নান। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হচ্ছেন আবু তাহের। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে জানান, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহের কারণে তিনি ভালো অবস্থানে রয়েছেন।

বরগুনার বেতাগীর সরিষামুড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন বর্তামন চেয়ারমান ইউসুফ শরীফ। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হচ্ছেন শিপন জমাদ্দার। বিএনপি সমর্থিত মিজানুর রহমান বাদল জানান, ইউসুফ শরীফ বর্তমান চেয়ারম্যান হওয়ায় এলাকায় তার প্রভাব রয়েছে। তার প্রভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাতে করে ভোট ভাগাভাগিতে তার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঝালকাঠির কেওড়া ইউনিয়ন থেকে পরপর দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা মঈন উদ্দিন তালুকদার। এবার সেখানে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী করা হয়েছে মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু বাকলাইকে। এ কারণে বিএনপি প্রার্থী এমএ মান্নান লাভলুর অবস্থা খুবই ভালো।

বিএনপির একাধিক প্রার্থী জানান, শক্ত অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা নির্বাচনী মাঠে তাদের প্রভাব বিস্তার করবে। এ কারণে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের প্রভাব কিছুটা হলেও কমবে। সে ক্ষেত্রে কোনোভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে আওয়ামী লীগের দু’প্রার্থীর টানা-হ্যাচড়ায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে। তারপরও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি-না তা নিয়ে তারা সংশয়ে রয়েছেন।

সাইফ আমীন/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।