অবশেষে আমন চাষ শুরু হলো ‘শস্যগোলা’ খ্যাত দিনাজপুরে
বৃষ্টিতে মাঠ ভিজতেই জোরকদমে আমন চাষের কাজে নেমে পড়েছেন ‘শস্যগোলা’ হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের কৃষকরা। এ বছর প্রথমদিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পর্যাপ্ত ছিল না। তাই বীজ তৈরি হয়ে গেলেও পানির অভাবে জমি তৈরি করতে পারছিলেন না তারা। তবে সোমবার রাতের টানা বৃষ্টিতে ঘাটতি অনেকটাই মিটেছে।
নিচু জমি এখন পানিভর্তি। উঁচু জমিতে চলছে সম্পূরক সেচ। জেলার সব জায়গাতেই চাষ শুরু হয়েছে। এভাবে বর্ষা চললে ধানচাষে এ বছর তেমন আর ভুগতে হবে না বলেই জানিয়েছেন চাষিরা।

বৃষ্টিতে চাষ শুরু হওয়ায় ফুলবাড়ী উপজেলার ১নং এলুয়ারী ইউনিয়নের পানাহার গ্রামের কৃষক আনোয়ার হাজী বলেন, আমরা আগে বীজ ফেলেছিলাম। বৃষ্টির অভাবে পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছিল, ভেবেছিলাম হয়তো এই বীজ মাটিতেই মরে যাবে। অনেকেই চারা তুলে দোগচি করে রেখেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে বৃষ্টি হওয়ায় আমরা বীজগুলোকে বাঁচাতে পেরেছি। এখন লাঙ্গল দিচ্ছি। চারা রোপণ করছি। এভাবে যদি বৃষ্টি হয় এবং প্রকৃতি সহায় হয় তাহলে চাষের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।
বিরল উপজেলার কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, সোমবার রাতের বৃষ্টিতে কৃষক মাঠে নেমে পড়েছে। নিচু জমিতে পানি জমেছে। আর উঁচু জমিতে সেচ দিয়ে আমন চারা রোপণ চলছে। দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় চাষ কিছুটা পিছিয়েছে। এবারের আবহাওয়ায় কৃষক বুঝে উঠতে পারছে না বর্ষা শেষ হয়ে গেলো নাকি শুরু হলো।
সদর উপজেলার কমলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, আমন বীজ বপনের পর বীজতলায় চারা বড় হয়ে যায়। এতে চারা তুলে দোগচি করে রেখেছিলাম। বৃষ্টি হওয়ায় সেই দোগচি তুলে নিচু জমিতে লাগাচ্ছি। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় উঁচু জমিতে চারা রোপণ করতে পারছি না।
তিনি বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে ঘাস গজিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো কীটনাশক ছিটিয়ে নষ্ট করে জমিচাষ করে চারা রোপণ করেছি। আবার যদি জমিতে ঘাস হয়, তাহলে আবারও কীটনাশক ছেটাতে হবে। এতে করে আমন চাষে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। জানিনা এবার ফসল কী হবে।
ঘোড়াঘাট উপজেলার কাদিমনগরের কৃষক সাব্বির হোসেন বলেন, কৃষকরা আষাঢ়ের ১৫ তারিখের পর ও শ্রাবণের ১৫ তারিখের মধ্যে সাধারণত আমন ধান রোপণ করেন। এবার শ্রাবণ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। এতে পানির অভাবে চারা লাগাতে পারেনি কৃষকরা।

তিনি আরও বলেন, চতুর্থ সপ্তাহে যে বৃষ্টি হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। তাই জমিতে পানি দেওয়ার জন্য বিঘা প্রতি গভীর নলকূপ মালিককে দিতে হবে ২২শো থেকে ২৩শো টাকা। যাদের শ্যালো মেশিন আছে তাদের খরচ হবে ১০০০ টাকা। এটি কৃষকের বাড়তি খরচ।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, দিনাজপুর জেলায় এবার আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার হেক্টোরের অধিক জমিতে। বৃষ্টির অভাবে এই মৌসুমে পিছিয়ে গেছে আমনের আবাদ। জেলার ১৩টি উপজেলায় এরইমধ্যে ৩৫ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। বৃষ্টির অভাবে আমন রোপণ কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে জানান তিনি।
এফএ/জিকেএস