অদম্য তামান্না এবার লিখেছেন বই, নাম দিয়েছেন ‘ইচ্ছার আলো’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৯:২৩ এএম, ২৭ আগস্ট ২০২৩

এক পায়ে যুদ্ধ জয় করা অদম্য তামান্না আক্তার এবার লিখেছেন বই। যার নাম দিয়েছেন ‘ইচ্ছার আলো’। বইটিতে তার জন্মের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেছেন। বিষয়টি তিনি নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জানান। বইটি প্রকাশনা করেছে তামান্না ফাউন্ডেশন, প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।

তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির সন্তান। জন্ম থেকেই দুই হাত ও একটি পা নেই তামান্নার। সব বাধা পেরিয়ে বাঁ পায়ে লিখে তামান্না মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। জীবনের সব পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। একই সঙ্গে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পড়ছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি)।

আরও পড়ুন: এক পায়েই অদম্য তামান্না

কঠিন বিপদের মধ্যেও প্রবল মানসিক শক্তি নিয়ে টিকে থাকেন অনেকে। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও বুদ্ধিদীপ্ত কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে তারা স্থান করে নেন অনেক সুস্থ মানুষের ওপর। হাজারো প্রতিবন্ধকতা স্বতেও মেধা ও সৃজনশীল কাজে তারাই সবার অনুপ্রেরণার উৎস। এমনি ধৈর্যশক্তি ও অধ্যবসায়ের বাস্তব দৃষ্টান্ত হলেন যশোরের সেই অদম্য তামান্না আক্তার নুরা।

বই লেখার বিষয়ে তামান্না আক্তার বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমার প্রথম লেখা বই প্রকাশিত হয়েছে। বইটি অনুপ্রেরণামূলক। বই লেখা আমার স্বপ্ন ছিল। শারীরিক অক্ষমতা কখনো স্বপ্নের পথে বাঁধা হতে পারে না। এটি আমি পাঠকদের মনেপ্রাণে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম। অবশেষে আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যখন বাড়ি বসেছিলাম, তখন বই লেখার পরিকল্পনা নেই। ভাবি আমার জীবন ও একটি প্রতিবন্ধী মেয়ের ওপর বইটি লিখলে সবশ্রেণি-পেশার মানুষ উপকৃত হবে। প্রতিবন্ধীদের কী কী বাধা থাকতে পারে, কী কী সমস্যা হতে পারে। এর উপায় কি? সব এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে লেখা শুরু করি। সেপ্টেম্বরে বইটির লেখা শেষ হয়। তবে এতদিন অর্থের অভাবে পাবলিশ করতে পারিনি। প্রায় এক হাজার কপি প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাস্তবতা মেনে যবিপ্রবির ইংরেজিতে ভর্তি হলেন সেই তামান্না

তামান্না উল্লেখ করেন, শারীরিক অক্ষমতা কোন বাধা হতে পারে না মানুষের জীবনে সেটাই ফুটিয়ে তুলেছি। আমার এ সফলতার সঙ্গে কারা যুক্ত ছিলেন এ বিষয়টিও বইয়ে ফুটিয়ে তুলেছি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ সবার পাশে থাকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছি। নিজের এক পা দিয়ে আঁকা বেশ কয়েকটি ছবির মাধ্যমে আমার জীবনের সব বাধা, প্রতিবন্ধকতা ও সাফল্য উল্লেখ করা হয়েছে।

বইটি শুধু প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণীদের জন্য নয় সাধারণ ছেলে মেয়েদের জন্যও বলে জানিয়েছেন তামান্না। বলেন, যারা অল্পতেই ভেঙে পড়ে তাদের জন্য বইটি অনুপ্রেরণা জোগাবে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলালে সমাজও পরিবর্তন হবে।

তামান্নার প্রকাশিত বইয়ের বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, তামান্না শিক্ষার্থীদের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমি জানতে পেরেছি তামান্নার লেখা বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবন্ধকতা ও বাধাকে অতিক্রম করে অদম্য তামান্না কীভাবে নিজেকে অনন্য হিসেবে উপস্থাপন করেছেন সেগুলো খুব দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। চরম ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো বাধাই কারও প্রতিভাকে দমিয়ে রাখতে পারে না সেটাই তিনি প্রমাণ করেছেন।

মিলন রহমান/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।