রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে চান ‘ধর্ষণ মামলার’ আসামি
রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সবশেষ কমিটি ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর ভেঙে দেয় তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের জন্য বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি চলতি বছরের ১০ জুলাই জীবনবৃত্তান্ত চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়। এরপর থেকেই শুরু হয় নতুন নেতৃত্বে আসর লড়াই। সেই লড়াইয়ে অনেকেরই নাম উঠে এসেছে। তাদেরই একজন বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহানুর রহমান সোহাগ। তবে নেতৃত্বে আসতে চাওয়া সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতার নামে আছে ধর্ষণ মামলা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের ৩০ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি অনুমোদন দেন। সেখানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান সাকিবুল ইসলাম রানা। তবে সাকিবুল ইসলাম রানা ছাত্রলীগে যোগদানের আগে ছাত্রদলের রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাস শাখা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। সে সময়ে ছাত্রদলের ওই কমিটিতে আহ্বায়ক ছিলেন শরিফুল ইসলাম নয়ন। রানা ছিলেন ওই কমিটির ছয় নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক।
২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেই কমিটির অনুমোদন দেন তৎকালীন রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মূর্ত্তজা ফামিন ও খন্দকার মুখসুদুর রহমান সৌরভ। ২০২২ সালে এ ঘটনা জানাজানি হলে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর জেলা কমিটি ভেঙে দেয় তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটি। এর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি হয়নি। এরপর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের জন্য বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি চলতি বছরের ১০ জুলাই জীবনবৃত্তান্ত চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়।
বিজ্ঞপ্তির পর শতাধিক নেতাকর্মী তাদের জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে জমা দেন। তাদেরই একজন ধর্ষণ মামলার আসামি সোহানুর রহমান সোহাগ। দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ছাত্রলীগ একটি আদর্শিক সংগঠন। সেইখানে যদি ধর্ষণ মামলার আসামি নেতৃত্বে আসে তবে এ সংগঠনের ঐতিহ্য ও আদর্শ নষ্ট হবে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সোহানুর রহমান সোহাগ তার পার্শ্ববর্তী এক গৃহবধূর কিছু নগ্ন ছবি সংগ্রহ করে। এরপর সেই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে কয়েক দফা ধর্ষণ করেন। সবশেষ ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তাকে ধর্ষণ করেন সোহাগ। ধর্ষণের কথা তার স্বামীকে জানান ওই নারী। বিষয়টি জানার পর তার স্বামী তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এর জেরে ধরে তিনি বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
২০২২ সালের ২ অক্টোবর ছাত্রলীগ নেতা সোহাগের বিরুদ্ধে রাজশাহীর আদালতে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে চলমান।
ভুক্তভোগী সেই নারী বলেন, ‘আমাকে ভয় দেখিয়ে কয়েক দফা ধর্ষণ করে সোহাগ। আমি থানায় মামলা করতে গেলেও তারা নেয়নি। বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, আমাকে ধর্ষণ করেছে। হুমকি দিয়েছে। আমার সামনেই সে বাড়ি যায়। তার শাস্তি হয় না। এটি নিয়ে আমি খুব কষ্ট পাই। আমি চাই তার সুষ্ঠু বিচার হোক।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মার্জিনা রায়হান মদীনা জাগো নিউজকে বলেন, মামলাটা রাজশাহীতে খারিজ হয়েছিল। পরে সেই নারী হাইকোর্টে মামলা করেন। এখানে মামলাটি গ্রহণ হয়েছে। দুই পক্ষের শুনানি হয়েছে পাঁচ-সাতদিন। আমাদের আপিল জজ গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ওই মামলাটি নতুন করে চালুর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি চলমান।
তিনি আরও বলেন, বিচারক বলেছেন মালাটি খারিজ করার কোনো সুযোগ নেই। এটার তদন্তপত্র রাজশাহীর আদালত গ্রহণ করতে পারতেন। তাই এটি আবারও চালু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সোহানুর রহমান সোহাগ জাগো নিউজকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। যেহেতু রাজনীতি করি তাই অনেকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই এটি করতে পারে। তবে যে মামলার কথাটি আপনি বলছেন সেটি রাজশাহী কোর্টে খারিজ হয়েছে। বর্তমানে কোনো মামলা চলমান নেই।
হাইকোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমার জানা নেই। তবে আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
এদিকে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মনে করছেন সোহানুর রহমান সোহাগকে এবার নেতৃত্বে আনতে চায় একটি পক্ষ। এজন্য জোর তদবিরও করা হচ্ছে। তবে ছাত্রলীগ একটি আদর্শিক সংগঠন সেখানে যদি তার মতো ধর্ষণ মামলার আসামি নেতৃত্বে আসে তবে এ সংগঠনের ঐতিহ্য ও আদর্শ নষ্ট হবে।
রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য ও জেলা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ফরহাদ হোসেন বিপ্লব বলেন, রাজশাহীতে সুন্দর ও সুষ্ঠু নেতৃত্ব অসুক সেটাই আমরা চাই। দলের ভেতরে ক্লিন ইমেজের কেউ আছেন এমন নেতৃত্ব চাই। তবে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগে কেউ কেউ ধর্ষণ মামলার আসামিকে নেতৃত্বে আনতে চায়। এমনটা যাতে না হয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া ছাত্রলীগ। এখানে কেন্দ্রীয় নেতারা দেখে শুনে জেনে বুঝে নেতৃত্ব ঠিক করবেন অবশ্যই।
সাখাওয়াত হোসেন/এসজে/এএসএম