ভারতে আটকে পড়া ৩ শতাধিক বাংলাদেশিকে ছাড়িয়ে আনেন অমলেন্দু
ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ভরসা হয়ে উঠছেন অমলেন্দু কুমার দাশ। গত ছয় বছরে নিজ খরচে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ৩ শতাধিক বাংলাদেশিকে ছাড়িয়ে পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ আটকে থাকা ১৯ জনকে ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
অমলেন্দু কুমার দাশ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার দক্ষিণ বাড়ন্তি গ্রামের অমূল্য চন্দ্র দাশের ছেলে। তিনি সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও তিনি লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সার থেকে অমলেন্দু কুমার দাশ ভারত ও বাংলাদেশে আটকা পড়াদের নিয়ে কাজ শুরু করেন। এ পর্যন্ত তিনি ৩ শতাধিক বাংলাদেশি ও ১৯ ভারতীয়কে মুক্ত করে স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে সহযোগিতা করেছেন। এ কাজের জন্যই তাকে মানবিক মানুষ বলা হয়।

আরও পড়ুন: দেশে ফিরলেন ভারতে আটকাপড়া ১১ বাংলাদেশি
অমলেন্দু কুমার দাশ বলেন, ভারতের আসামের পাথারকান্দির জয়ন্তী বিশ্বাস ছেলেকে নিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে মৌলভীবাজার কারাগারে বন্দি হন। আদালত তাদের এক মাসের কারাদণ্ড দেন। সাজার মেয়াদ শেষ হলেও নানা প্রশাসনিক জটিলতায় তারা নিজ দেশে যেতে পারছিলেন না। প্রায় দুই মাস সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দৌঁড়ঝাপ করে তাদের মুক্তির আদেশ হাতে পাই। অবশেষে ১৬ মাসের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে মা-ছেলেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেই। সেদিন বর্ডারে অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মা-ছেলের ঘরে ফেরার আনন্দে এ ধরনের কাজে উৎসাহ বেড়ে যায়।
পরে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের সব ভারতীয় বন্দি ও সিলেট জেলা কারাগারের কয়েকজন বন্দিকে নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। তারা ১৪-১৯ বছর বাংলাদেশের কারাগারে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি ছিলেন।

তিনি আরও জানান, বেতনের একটা অংশ এ কাজে ব্যয় করে থাকি। এখন অসহায় বন্দিদের মুক্ত করা নেশায় পরিণত হয়েছে। তাদের মুক্তির আনন্দে সব কষ্ট-যন্ত্রণা ভুলে যাই।
নজির আহমেদ নামের একজন জানান, বিদেশ পাঠানোর কথা বলে আমাকে ভারত পাঠিয়ে দেন দালাল চক্র। সেখানে দুই বছর আমার সাজা হয়। কিন্তু আমি আরও বেশি সাজা খেটেছি। অমলেন্দু আমাকে ছাড়িয়ে আনতে সহযোগিতা করেছেন। আমার কাছ থেকে এক টাকাও নেননি।

স্থানীয় কামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আপ্পান আলী বলেন, অমলেন্দু কুমার আমার এলাকার কৃতি সন্তান। তিনি যে মানবিক কাজ করেছেন সেটি যেন অব্যাহত থাকে। তিনি যে মানবিক কাজ করেছেন তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন চৌধুরী বলেন, মানবিক কাজের জন্য অমলেন্দু কুমার দাশকে অভিনন্দন। এ ধরনের কাজে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।
আরএইচ/এমএস