দুর্নীতির অপর নাম নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম

এম এ মালেক
এম এ মালেক এম এ মালেক , জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪:২৮ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৩

দুর্নীতির অভিযোগ যেন পিছু ছাড়ছে না সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের। অধিদপ্তরের তদন্তে সম্প্রতি একটি প্রকল্পেই ৩৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫১ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জে যোগদান করার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একাধিক প্রকল্পে এরকম আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

জেলার তাড়াশ উপজেলাধীন টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ ভদ্রাবতী ও উত্তর ভদ্রাবতী খাল পুনঃখনন প্রকল্পে ব্যাপক দুনীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে অধিদপ্তরের নির্দেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ পাবনা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম কয়েক দফায় সরেজমিন তদন্ত করে এ প্রমাণ পান। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করেছে।

পাবনা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলামের তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলাধীন টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ ভদ্রাবতী ও উত্তর ভদ্রাবতী খাল পুনঃখনন প্রকল্পে ব্যাপক দুনীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এরপর ৩ আগস্ট ২০২৩ তারিখে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ পাবনা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলামকে তদন্তের নির্দেশ দেয় এলজিইডি বিভাগ। সেই প্রেক্ষিতে মনিরুল ইসলাম দায়িত্ব পেয়ে সরেজমিন কয়েক দফা এসে অনুসন্ধান করেন। তার এ দীর্ঘ তদন্তে নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম, টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান এবং উপকারী সহকারী প্রকৌশলী তারেক আজিজসহ হিসাব ও বিল সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ লোপাটের প্রমাণ মেলে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিপত্র উপেক্ষা করে পুরো প্রকল্পই এস্কেভেটর দিয়ে যন্ত্রভিত্তিক খণন করা হয়। এছাড়া ভুয়া মাস্টাররোলে মৃত ব্যক্তিদের ‘জীবিত’ ও প্রবাসীদের শ্রমিক দেখিয়ে খনন কাজের বিল দেওয়া হয়। এভাবে ৩৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫১ টাকা কর্মকর্তারা উত্তোলন ও আত্মসাৎ করেছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়।

এছাড়া এ অভিযোগের বাইরেও কামারখন্দের ঝাঐল-ভারাঙ্গায় টেন্ডার বা কোটেশন না করেই প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩টি স্থানে নামমাত্র হেরিংবন কাজ করানো হয়। শুধু তাই নয়, সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে নির্বাহী প্রকৌশলী নিজ দপ্তরের প্রায় ৩০ কোটি টাকার মেরামত ও সংস্কার কাজের ‘চূড়ান্ত বিল’ পরিশোধ করেন। এর মধ্যে সাড়ে ১২ কোটি টাকার রাস্তা তাড়াশ-কুন্দইল-বারুহাস, রায়গঞ্জের নিমগাছি-সলঙ্গা রাস্তা, কাজীপুরের মনসুরনগর ইউনিয়ন-ছালালহাট রাস্তা ও ৮১ মিটার পিএসসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, কাজীপুরের সোনামুখী-ভানুডাঙ্গা রাস্তা ও সোনামুখী-হরিনাথপুর রাস্তা রয়েছে। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কামারখন্দ উপজেলা পরিষদ পুকুর ও বলরামপুর আদর্শগ্রাম পরিষদ পুকুর উন্নয়ন প্রকল্পে নামমাত্র কাজ হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধের অভিযোগ রয়েছে এ নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।

দুর্নীতির অপর নাম নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম

অভিযোগ রয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলী পদের ক্ষমতাকে পুঁজি করে তিনি ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত টাকা দিয়ে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ গড়েছেন বলেও কথিত রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের এক কর্মচারী জাগো নিউজকে জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বিভিন্ন রকমের অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। এসব বিষয়ে বিভাগীয় তদন্তে সেটার প্রমাণও মিলেছে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে তার কিছুই হচ্ছে না।

তবে অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দক্ষিণ ভদ্রাবতী ও উত্তর ভদ্রাবতী খাল পুনঃখনন প্রকল্পে অধিদপ্তর তদন্ত করেছে। এগুলো নিয়ে আর কিছু কইরেন না।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাবনা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তাড়াশের ভদ্রাবতী খাল পুনঃখননে ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি যেনতেন ভাবে ওই খাল খনন করে প্রায় ৩৬ লাখ সরকারি টাকা লোপাট করেছেন। সেটার সরেজমিন অনুসন্ধান করে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ করেছি।

তবে এ বিষয়ে জানতে প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) আবু সালেহ মো. হানিফের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।