নেত্রকোনায় নির্ভার সাজ্জাদ, অন্য ৪ আসনে তুমুল লড়াইয়ের আভাস
নেত্রকোনা জেলায় সংসদীয় আসন সংখ্যা পাঁচটি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে চারটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিললেও একটি আসনে (নেত্রকোনা-৪) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে নির্ভার মনে করছেন ভোটাররা। প্রবল কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ওই আসনে নির্বাচন হতে পারে অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন। আসনটিতে গত জুলাই মাসেই (৩১ জুলাই) উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়েছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান। এবারও তিনি নৌকাকে নিরাপদে তীরে ভেড়াবেন বলে স্থানীয় মানুষের মাঝে আলোচনা রয়েছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোশতাক আহমেদ রুহী (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম রব্বানী (লাঙ্গল), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী আহমদ শফী (ছড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা (ট্রাক) ও আফতাব উদ্দিন (ঈগল)।
আসনটিতে ভোট ভোটার চার লাখ ১৮ হাজার ১৮৯ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৮ জন, নারী ২ লাখ ৫ হাজার ১৩৫ ভোট ও হিজড়া ভোটার ৬ জন।
নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ আলী খান খসরু (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোছা. রহিমা আক্তার আসমা সুলতানা (লাঙ্গল), ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী মো. ইলিয়াস (মিনার), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) প্রার্থী এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার (নোঙ্গর), বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী আজহারুল ইসলাম খান (ডাব), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় (ঈগল), সুব্রত চন্দ্র সরকার (ট্রাক)।
আসনটিতে ভোট ভোটার চার লাখ ৬৭ হাজার ৬ জন ভোটার। তাদের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৫৩ জন, নারী ২ লাখ ৩১ হাজার ৫৪২ ভোট ও হিজড়া ভোটার রয়েছেন ১১ জন।
নেত্রকোনা-৩ (আটপাড়া- কেন্দুয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অসীম কুমার উকিল (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী জসীম উদ্দিন ভূঁঞা (লাঙ্গল), ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী মো. এহ্তেশাম সারওয়ার (মিনার), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান খান (সোনালী আশ), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ইফতিখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু (ট্রাক), সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুর কাদের কোরাইশী (ঈগল)।
আসনটিতে ভোট ভোটার তিন লাখ ৯৫ হাজার ২৯২ জন ভোটার। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১ হাজার ১৪৮ জন, নারী ১ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৮ ভোট ও ৬ জন হিজড়া রা ভোটার রয়েছেন।
নেত্রকোনা-৪ (মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুরী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাজ্জাদুল হাসান (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. লিয়াকত আলী খান (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. আল মামুন (সোনালী আশ), জাসদের প্রার্থী মো. মুশফিকুর রহমান (মশাল)।
আসনটিতে ভোট ভোটার চার লাখ ৫১ হাজার ৫৮৬ জন ভোটার। তাদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৬ জন, নারী ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫১৫ ভোট ও হিজড়া ভোটার ৫ জন।
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহমদ হোসেন (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান আজাদ (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আব্দুল ওয়াহ্হাব হামিদি (সোনালী আশ), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসেন (ঈগল)।
আসনটিতে ভোট ভোটার ২ লাখ ৭২ হাজার ৩৩৩ জন ভোটার। তাদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৭২ জন, নারী ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬০ ভোট ও হিজড়া ভোটার রয়েছেন ১ জন।
নেত্রকোনা-১ আসনে নৌকার রুহীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ঝুমার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছেন। ঝুমা তালুকদার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। তার বাবা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন তালুকদার এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঝুমা দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। পরে তিনি দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এবার এই আসনে ঝুমাসহ মোট পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটাররা বলছেন, এই আসনে রুহী ও ঝুমার মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
নেত্রকোনা-২ আসনে (সদর-বারহাট্টা) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বর্তমান এমপি ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু। জেলা সদরের এই আসনটি বরাবরই আওয়মী লীগের দখলে থাকে। কিন্তু এবার এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে লড়ছেন সাবেক এমপি, উপমন্ত্রী ও ফুটবলার আরিফ খান জয়। এবারের নির্বাচনে তিনি বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নূর খান মিঠু, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শামীম খান, ছোট ভাই জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাসুদ খান জনি এবং তাদের মামা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মম খান পাঠান বিমলসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে পাশে পাচ্ছেন। এছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্যের অনুসারী নন এমন কয়েকজন নেতাও জয়ের পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
ভোটাররা বলছেন, এই আসনে বারহাট্টা উপজেলার বেশিরভাগ নেতাকর্মীও জয়ের পক্ষে কাজ করছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এই আসনে খসরু ও জয়ের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে।
নেত্রকোনা-৩ আসনে (আটপাড়া-কেন্দুয়া) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে লড়ছেন সাবেক এমপি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু ও ঈগল প্রতীকে লড়ছেন সাবেক এমপি মঞ্জুর কাদের কোরাইশী। এই আসনে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। এরই মধ্যে পিন্টু ও অসীমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
নেত্রকোনা-৪ আসনে (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান। তার বড় ভাই ওবায়দুল হাসান শাহীন প্রধান বিচারপতি। এই আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী নেই। তবে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু জেলাব্যাপী নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকায় আলোচনায় বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন সাজ্জাদুল হাসান।
স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, জয়ের ব্যাপারে অনেকটা নির্ভার হলেও নৌকার এই মাঝি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। হাওর এলাকার উন্নয়নে নৌকার প্রার্থীকেই বিজয়ী হিসেবে দেখতে চান হাওড়পাড়ের মানুষ।
নেত্রকোনা-৫ আসনে (পূর্বধলা) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটি পাঁচবারের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীক শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবার মনোনয়ন চাননি। তবে তার বড় ভাই জাসদ নেতা জাহাঙ্গীনরগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি। তিনি এ আসনে স্বতস্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এছাড়া আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম সোহেল ফকির উচ্চ আদালত থেকে মনোনয়ন ফিরে পাওয়ায় বেশ চাঙ্গা হয়েছেন ভোটাররা। এখানেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জয় খুব সহজ হবে না বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।
নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান লিটন জাগো নিউজকে বলেন, দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন জেলার পাঁচটি আসনেই নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে। নেত্রকোনার ৮৬টি ইউনিয়নের সর্বস্তরের ভোটাররা ৭ জানুয়ারি নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিতে উৎসুক হয়ে আছেন।
এইচ এম কামাল/এমকেআর