২ বছর বন্ধের পর মোংলা বন্দরে ড্রেজিং শুরু

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মোংলা (বাগেরহাট)
প্রকাশিত: ০৯:৫৮ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ড্রেজিংয়ের উত্তোলিত বালু-পলি মাটি ফেলার জায়গার জটিলতা কেটে যাওয়ায় বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের ইনারবার চ্যানেলের ড্রেজিং কার্যক্রম ফের শুরু হয়েছে।

দীর্ঘ প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল হতে বন্দরের পশুর নদীর বেসক্রিক বয়া এলাকা থেকে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন সেকশন-৪ এর আওতায় বাল্কহেড ড্রেজারের মাধ্যমে খনন কাজ শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জাগো নিউজকে জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে নিয়মিত পশুর চ্যানেল ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। ২০২১ সালের ১৩ মার্চ শুরু হওয়া ইনারবার ড্রেজিংয়ের খননকৃত পলি মাটি রাখার জায়গার অভাব দেখা দিলে কাজ বন্ধ হয়। তবে আপাতত খননকৃত পলি রাখার জায়গা নির্ধারণ হওয়ায় আবারো ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ড্রেজিংয়ের মাটি রাখা হচ্ছে জয়মনি এলাকায়। এখন থেকে ইনারবারের ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার রাসেল আহম্মেদ খান বলেন, ড্রেজিং বন্ধ থাকলেও পশুর চ্যানেল স্বাভাবিক ছিল। জাহাজ চলাচলে সমস্যা হয়নি। তবে নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা না গেলে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হবে। এজন্য শুক্রবার থেকে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা হয়। এর আগে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরুর আগে সার্ভে করে দেখা হয়েছে যে কতটুকু পলি জমেছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া এলাকা থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত এলাকার নাম ‘ইনারবার’। ইনারবারের ২৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার এলাকায় ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের উদ্ধোধন করা হয় ২০২১ সালের ১৩মার্চ। ওই বছরের ১০ এপ্রিল ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৯৩ কোটি টাকা।

ড্রেজিং করা বালু বা পলি মাটি ফেলার জন্য মোংলা উপজেলায় ৭০০ একর জমি ও খুলনার দাকোপ উপজেলায় বানিশান্তা এলাকায় ৩০০ একর জমি হুকুম দখল করা হয়। মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকার জমিতে বালু ফেলা হয়। কিন্তু পশুর নদীর পূর্ব পাশের খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তার তিন ফসলি জমিতে বালু ফেলা ঠেকাতে আন্দোলন করেন এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আপত্তির মুখে সেখানে বালু ও মাটি ফেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ কারণে প্রায় দুই বছর ড্রেজিং বন্ধ ছিল।

পরে মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্ধা মৌজায় ২৬২ একর জমিতে বালু ফেলানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েয় ২০২২সালের জুন মাসে। এ পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩৪ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাড়িয়েছে ৯৯২ কোটি টাকায়, যা গত বছরের ৪ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক্স) শেখ শওকত আলী বলেন, ইনারবারের গভীরতা সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় মিটার। ড্রেজিং করে সাড়ে আট মিটার করার কথা। ড্রেজিং করা স্থানগুলো থেকে যে পরিমাণ পলি অপসারণ করা হয়েছিল, গত প্রায় দুই বছরে তার ৭০ ভাগ পলি আবারো জমা হয়েছে। এ অবস্থা ড্রেজিং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ড্রেজিং কাজ বন্ধ থাকায় এতদিনে পলি পড়ে নাব্যতা কমে গেছে। এছাড়া ড্রেজারের তেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে।
বালু ফেলা জায়গা সংকটের বিয়য়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পুরোনো জায়গা জয়মনি এলাকায় আপাতত বালু ফেলা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সেকশন-০৪ আওতায় বাল্কহেড ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কেটে অন্য একটি বাল্কহেডে তোলা হচ্ছে। পরে তা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে কাটার সাকশন ড্রেজার দিয়ে পুরোদমে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে।

আবু হোসাইন সুমন/এনআইবি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।