বরিশাল
অপরিকল্পিত খাল খননে ভাঙছে সড়ক
বরিশালে জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর ২৪টি খালের মধ্যে প্রধান সাত খালের প্রাণ ফেরাতে খনন কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু অপরিকল্পিত খননের ফলে বিভিন্ন স্থানে সড়কে দেখা দিয়েছে ফাটল। এতে অনেকের বাড়ি ঘর পড়েছে হুমকির মুখে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম সাগরদী এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের খাল খনন পরিদর্শন করে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড না হওয়ায় খালপাড়ের বাসিন্দাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশন থেকে ভেঙে যাওয়া সড়ক সংস্কারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্বে বরিশালে ৪৬ টি খালের অস্তিত্ব ছিলো। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ সংখ্যা কমে হয় ২৪। বর্তমানে বড়-ছোট মিলিয়ে টিকে থাকা ২৪টি খালও পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। দখল-দূষণ আর অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে টিকে থাকা খালগুলো মরা খালে পতিত হচ্ছে। আর হারিয়ে গেছে ২২টি খাল। এর মধ্যে এখন প্রাথমিক ভাবে সাতটি প্রধান খালের খনন কাজ শুরু হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বরিশাল নগরীর সাত খাল খননে ছয় কোটি সাত লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকায় পলাশপুর খাল (১৭০০ মিটার), এক কোটি ৯ লাখ টাকায় আমানতগঞ্জ খাল (২০৫০ মিটার), দুই কোটি ৬৭ লাখ টাকায় সাগরদী খাল (৯ কিলোমিটার), ২৮ লাখ টাকায় রুপাতলী খাল (এক কিলোমিটার), ৩২ লাখ টাকায় চাঁদমারি খালের (১৪২১ মিটার), চার লাখ টাকায় ভাটার খাল (১৬০ মিটার) ও ২৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় জেল খালের (২ কিলোমিটার)। সর্বমোট ১৯ কিলোমিটারে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে খননকাজ শেষ হওয়ার কথা।
এরইমধ্যে চাঁদমারি শোভা রাণী খালের খননকাজ প্রায় শেষ। সাগরদী ও পলাশপুর খালের কাজও চলছে।
নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম সাগরদী এলাকার বাসিন্দা ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খাল খননে করতে এসে এমনভাবে স্কেভেটর চালানো হয় তাতে আশপাশের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে খাল খননের কারণে সাগরদী খালের পাশের রাস্তার ৪-৫ হাত জায়গা ভেঙে খালের মধ্যে পড়ছে। ভেঙে যাওয়া রাস্তা আবার কবে নাগাদ সংস্কার হবে কে জানে।
একই অভিযোগ ২৪ নং ওয়ার্ডের জিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের। তিনি জানান, খ্রিষ্টানপাড়া থেকে আধা কিলোমিটার পাকা ও বাকি প্রায় আধা কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রক্ষায় পাইলিং না দেওয়ায় খাল খনন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে খালে পড়ে গেছে। অনেক জায়গায় সড়কে বড় ফাটল ধরেছে।
রূপাতলী খাল খননে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল মামুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন ভুলু বলেন, খননের কারণে কিছু সড়কের ক্ষতি হয়েছে। পাড় বাঁধাই করার সময় সড়ক সংস্কার করা হবে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ জাগো নিউজকে বলেন, খননকাজের জন্য কিছু কিছু স্থানে সমস্যা হয়েছে বলে জেনেছি। এগুলো নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সংস্কার করা হবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন জানান, খনন কাজে সড়ক ভেঙে পড়ার বিষয়টি খোঁজ নিবো। কোথাও সমস্যা হলে তা সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাওন খান/এনআইবি/এএসএম