থামানো যাচ্ছে না বালুভর্তি ডাম্পট্রাক, ঝুঁকিতে রেলসেতু

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)
প্রকাশিত: ১২:৪৬ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সেতুর নিচ দিয়ে ট্রাক চলায় ঝুঁকিতে রেলসেতু

বালু ও মাটিবাহী ডাম্পট্রাকে হুমকিতে রয়েছে জয়দেবপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু রেল সংযোগ সড়কের ৫০ নম্বর সেতু। এটি রক্ষায় রেলওয়ে বিভাগ স্লিপার পুঁতে রাস্তা বন্ধ করে ও বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও বন্ধ করতে পারছে না মাটি পরিবহন। সেতুটি রক্ষার্থে রেলওয়ের পাকশী বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মন্ডল ও জয়দেবপুরের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী এম রিয়াসাদ ইসলাম বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু সেতুটির নিচ দিয়ে স্লিপার তুলে আগের মতোই ওভারলোড মাটিভর্তি ডাম্পট্রাক চলাচল অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলার বংশাই নদীর যোগীরকোফা-রশিদ দেওহাটা ও কদিম দেওহাটা এলাকায় প্রায় ৪৩ একর ভূমিতে সরকারি বালুমহাল রয়েছে। ভূমিদস্যু একটি চক্র প্রতিবছর ওই বালুমহাল থেকে রাতের আঁধারে লাখ লাখ টাকার বালু লুট করে বিক্রি করে থাকে। এ বছরও চক্রটি বালু লুট করে বিক্রি শুরু করেছে। বালুভর্তি শত শত অভারলোড ডাম্পট্রাক জয়দেপুর-বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু রেল সড়কের ৫০ নম্বর সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করায় সেতুটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

সেতুটির ঝুঁকি এড়াতে রেলওয়ের পাকশী বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মন্ডল রাস্তাটি বন্ধের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে গত ২৭ জানুয়ারি রেলওয়ের জমিতে তিনটি ইউএস পিএসসি স্লিপার পুঁতে অবৈধ রাস্তা বন্ধ এবং রাতে আনসার সদস্যদের দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করেন দায়িত্বরত রেলওয়ের ১১ নম্বর গ্যাং মিস্ত্রি মতিয়ার রহমান। কিন্তু গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে মাটি ব্যবসায়ীরা রাস্তা বন্ধের স্লিপারটি তুলে অবৈধভাবে বালুভর্তি ডাম্পট্রাক চলাচল অব্যাহত রাখে। আনসার সদস্য ও রেলওয়ের নাইটগার্ড এতে বাধা প্রদান করলে মাটি ব্যবসায়ীরা তাদের নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।

থামানো যাচ্ছে না বালুভর্তি ডাম্পট্রাক, ঝুঁকিতে রেলসেতু

রেল সড়কের ৫০ নম্বর সেতুর নিচ দিয়ে অবৈধভাবে ডাম্পট্রাক চলাচল বন্ধ করতে ৫ ফেব্রুয়ারি জয়দেবপুরের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী এম রিয়াসাদ ইসলাম রেলওয়ের কমলাপুর থানার ওসি বরাবর (স্মারক নং-ই/চুরি/এজাহার/জয়দেবপুর/২০০৪) একটি পত্র দেন। এছাড়া রেলওয়ের পাকশী বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মন্ডল একই দিন (স্মারক নং-৫৪.০১.০০০০.৩০৩.০২.০১০.২০২২-২৩) রেলওয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং রেলওয়ের পাকশী বিভাগের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা বরাবর লিখিতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পত্র দেন। পত্রগুলোর অনুলিপি রেলওয়ের বিভিন্ন দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান রেল সেতুটি পরিদর্শন করেন। এছাড়া সরকারি বালুমহালে বালু কাটার অপরাধে দুইজনের কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। অজ্ঞাত কারণে ওই রাত থেকেই আবার বালুকাটা ও রেলসেতুর নিচ দিয়ে মাটি পরিবহন অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যোগীরকোফা বালুমহাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। এখানে আবাদি জমির ওপর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে রেল সেতুর নিচ দিয়ে ভারি ডাম্পট্রাকে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। যোগীরকোফা-রশিদ দেওহাটা ও কদিম দেওহাটা বালুমহালের স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী শাজাহান মিয়া নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বালু ও মাটি বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। এ বছরও তিনি বালু ও মাটি বিক্রি শুরু করেছেন। প্রতি বছর ৬-৭টি ভেকু মেশিন দিয়ে বালু কাটা হতো। এবার ৪টি ভেকু মেশিন দিয়ে প্রতিরাতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক বালু বিক্রি করছেন তিনি। প্রতি ডাম্পট্রাক বালু ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে প্রতিদিন ৩০০ ট্রাক মাটির দাম হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যা প্রতি মাসে দাঁড়ায় এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

প্রতিবছর এই বালুমহালে তিন থেকে চার মাস বালু ও মাটি বিক্রির মহোৎসব চলে। শাজাহান মিয়া সরকারি বালুমহাল থেকে লাখ লাখ টাকার বালু বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিলেও রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছকু রশিদ দেওহাটা গ্রামের কয়েকজন জানান, শুনেছি রেল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছে। এরপরও মাটি কাটা বন্ধ হয় না। রেল সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে।

থামানো যাচ্ছে না বালুভর্তি ডাম্পট্রাক, ঝুঁকিতে রেলসেতু

এ বিষয়ে বালু ব্যবসায়ী শাজাহান মিয়ার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

রেলওয়ের ১১ নম্বর গ্যাং এর মিস্ত্রি মতিয়ার রহমান বলেন, আনসার সদস্য ও রেলওয়ের নাইটগার্ড স্লিপার তোলার সময় বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু মাটি ব্যবসায়ীরা তাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে স্লিপার তুলে মাটির ট্রাক চলাচল শুরু করে। বিষয়টি কর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে।

জয়দেবপুরের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী এম রিয়াসাদ ইসলাম বলেন, রেল কর্তৃপক্ষের পুঁতে রাখা স্লিপার তুলে রেল সেতুর নিচ দিয়ে প্রতিরাতে মাটি ভর্তি ৫০-৬০ টন ওজনের ডাম্পট্রাক চলাচল করছে। এতে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় রেল সড়ক ও সেতুর ক্ষতি হয়ে বড় ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী বীরবল মন্ডল বলেন, রেলওয়ের সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব সকল নাগরিকের। রেল সেতুর নিচ দিয়ে ভারি ডাম্পট্রাক চলাচল করায় স্লিপার পুঁতে রাস্তা বন্ধ এবং আনসার সদস্য দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু স্লিপার তুলে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে এবং আনসার সদস্যদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

রেলওয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ক্ষতি সাধনের মামলা করলে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।

টাঙ্গাাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতিদিন মির্জাপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। রেলওয়ের পত্র এখনও পাননি। তবে পত্র পাওয়া মাত্রই আইনগত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এস এম এরশাদ/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।