৫ সাংবাদিককে অফিসে আটকে রাখলেন এসিল্যান্ড, জেলে পাঠানোর হুমকি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ০৮:০৭ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২৪
অভিযুক্ত এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার

লালমনিরহাট সদরে জমি খারিজ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়ায় পাঁচ সাংবাদিককে অফিসে তালা লাগিয়ে আটকিয়ে গালিগালাজ ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

প্রায় ৪০ মিনিট পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি এম এ মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অফিস গেটের তালা খুলে সাংবাদিকদের মুক্ত করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ওই সহকারী কমিশনার সাংবাদিকদের ‘দালাল’ বলে অপমান করতে থাকেন। এসময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পরিস্থিতি শান্ত করেন।

৫ সাংবাদিককে অফিসে আটকিয়ে রাখলেন এসিল্যান্ড, জেলে পাঠানোর হুমকি

এর আগে একটি টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসনের মোটরসাইকেল আটকিয়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমান করেন এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার।

এ ঘটনার পর সাংবাদিকরা শহরের মিশন মোড়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। দুপুর ২টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি এম এ মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা অভিযুক্ত এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা অবস্থান ধর্মঘট তুলে নেন।

সাংবাদিকরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের তিনজন অফিস সহকারী ভূমি সংক্রান্ত শুনানি করছিলেন। সেখানে এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ-আল-নোমান উপস্থিত ছিলেন না। মাই টিভি ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সাংবাদিক মাহফুজ সাজু এ শুনানির ভিডিও ধারণ করেন। এতে অফিসের স্টাফরা ক্ষুদ্ধ হয়ে এসিল্যান্ডকে ডেকে আনেন। পরে এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ-আল-নোমানের নির্দেশে সাংবাদিককে মাহফজু সাজুকে আটকিয়ে রাখা হয়। এ খবর পেয়ে এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি নিয়ন দুলাল, দৈনিক কালবেলার এসকে সাহেদ, ভোরের চেতনার ফারুক আহমেদ ও আমার বার্তার কাওছার আহমেদ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকেও অফিসে আটকে রাখা হয়।

৫ সাংবাদিককে অফিসে আটকিয়ে রাখলেন এসিল্যান্ড, জেলে পাঠানোর হুমকি

সাংবাদিক মাহফুজ সাজু বলেন, ‘সেবা নিতে আসা লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয় সহকারী কমিশনাররের (ভূমি) অফিসে। এ তথ্য জানতে এসে সত্যতা পাই। এসিল্যান্ড আমাকে অফিসে আটকালে সহকর্মীদের ফোন দিলে তারা ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় এসিল্যান্ড তাদেরকেও অফিসে আটকিয়ে রাখেন। তিনি সাংবাদিকদের বিষয়ে খুবই অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছেন। আমাদের জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন।’

চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক মিজানুর রহমান মিজুর সহকারী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মোটরসাইকেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল কিন্তু সঙ্গে ছিল না। এসিল্যান্ডের কাছে ১০ মিনিট সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষুদ্ধ থাকায় কোনো সময় দেননি। তিনি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন।’

সাংবাদিকদের অফিসে আটকিয়ে গালিগালাজ ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার বিষয়ে এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এক মোটরসাইকেল আরোহীর পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বলে জানান।

৫ সাংবাদিককে অফিসে আটকিয়ে রাখলেন এসিল্যান্ড, জেলে পাঠানোর হুমকি

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি এম এ মমিন বলেন, সহকারী কমিশনারের অনুপস্থিতিতে অফিস সহকারীরা কোনোভাবেই জমির খারিজ শুনানি করতে পারেন না। বিষয়টি জেলা প্রশাসক খতিয়ে দেখছেন।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রবিউল হাসান/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।