চুয়াডাঙ্গায় পশুহাট

গরুর দামে সন্তুষ্ট খামারি ও বিক্রেতা

হুসাইন মালিক
হুসাইন মালিক হুসাইন মালিক চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ০৮:৫০ এএম, ১১ জুন ২০২৪

আসন্ন ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গায় জমে উঠেছে ১১টি পশুর হাট। হাটগুলোতে বাড়ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ভিড়। কোরবানির পশুর দামও ভালো বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। চুয়াডাঙ্গার শিয়ালমারী পশুহাট, ডুগডুগি পশুহাট, মুন্সিগঞ্জ পশুহাট এবং আলমডাঙ্গা পশুহাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সোমবার (১০ জুন) ডুগডুগি পশুহাটে গরু বিক্রি করতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিনের তুলনায় এখন গরু ও ছাগলের দাম তুলনামূলক বেশি।

মৃগমারী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী মো. হাবেল উদ্দীন বলেন, অন্যদিনের তুলনায় আজকের হাটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারীরা এসেছেন। এ কারণে গরুর দামও বেশি। আজ হাটে পাঁচটা গরু এনেছিলাম। সবগুলো গরু বিক্রি হয়ে গেছে। লাভও বেশি হয়েছে। গরুর দাম এরকম থাকলে গরু পালনকারীরা লাভবান হবেন।

চুয়াডাঙ্গায় পশুহাট, গরুর দামে সন্তুষ্ট খামারি ও বিক্রেতা

হাটে গরু কিনতে আসা হাফিজ খান নামের এক ক্রেতা বলেন, কোরবানি করার জন্য মাঝারি গরু খুঁজছি। এ বছর গরু প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাম বেশি মনে হচ্ছে। যেহেতু কোরবানি করতে হবে তাই বেশি দাম দিয়েই গরু কিনতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে আসা বেশ কয়েকজন বেপারি বলেন, প্রতিবছরই এ হাটে আসি। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার গরুর আমদানি বেশি আর দামও সাশ্রয়ী।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজার ৯১৭টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২ হাজার ৬৭৬টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩ হাজার ৫৯৯টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১ হাজার ৯২৮টি এবং জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৭১৪টি। এসব খামারে কোরবানি উপলক্ষে ২ লাখ ১১ হাজার ৮৭৯টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৫৪ হাজার ৮৯১টি, মহিষ ১৬০টি, ছাগল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬ টি, ভেড়া ৩ হাজার ৯২ টি এবং অন্যান্য ৭টি।

এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬টি। সে হিসাবে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৫৩ হাজার ২৩টি কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এসব পশু ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হবে।

দামুড়হুদা উপজেলা সদরের দশমী গ্রামের এক খামারি বলেন, ৫-৬ বছর আগে খামার গড়েছিলাম। খামারে মোট ১৫টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি গরুর দাম বর্তমান বাজারমূল্যে থাকে তাহলে খামারিরা লাভবান হবেন।

আরও এক খামারি বলেন, পাঁচ বছর আগে শখের বশে একটি খামার তৈরি করি। আমার খামারে বর্তমানে ১০টি গরু রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি গরু বিক্রি করেছি। বাকি গরু ঈদের মধ্যে বিক্রির আশা করছি। যদি এমন দাম থাকে তাহলে লাভবান হতে পারবো।

চুয়াডাঙ্গায় পশুহাট, গরুর দামে সন্তুষ্ট খামারি ও বিক্রেতা

জীবননগর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের খামারি আবুল বাশার বলেন, আমার খামারে ৪০টি কোরবানি উপযুক্ত গরু ছিল। ৩৫টি গরু এরইমধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। এখনো খামারে ১০টি গরু আছে। এই গরুগুলো আরও সাইজে বড়। বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বলতে পারছি না লাভ হবে নাকি লোকসান হবে।

তিনি আরও বলেন, খাবারের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি। এলাকায় বিক্রি উপযুক্ত কোরবানির গরু গত বছরের তুলনায় কম। বেচাকেনাও গত বছরের তুলনায় কম।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলায় এবার কোরবানির জন্য ৫৪ হাজার ৯৭৯টি গরু ও মহিষ মোজাতাজা করা হয়েছে। এছাড়া এবার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮২১টি ছাগল ও ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। খামারগুলোতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু উৎপাদনে খামারিদের প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন পশুহাট ও খামারগুলোতে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। খামারিদের পালন করা পশু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার চাহিদা পূরণ করবে। খামারিরা এবার কোরবানির পশুর ন্যায্যমূল্য পাবেন।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান জানান, পশুহাটগুলোর নিরাপত্তার জন্য পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করছে। গরুর হাটে জাল নোট ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ঠেকানোর জন্য পুলিশের নজরদারি রয়েছে। এরইমধ্যে গত ৪ দিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ অজ্ঞান পার্টির ৬ সদস্যকে কেমিকেলসহ আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া ব্যাপারীদের পশু আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেও পুলিশের বাড়তি নজরদারি রয়েছে।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।