২৫ লাখে বিক্রি হবে ৩২ মণের সুলতান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ১১ জুন ২০২৪

ফরিদপুরের সুলতান। পবিত্র ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে সবার নজর কেড়েছে ৩২ মণ ওজনের ষাড়টি। হলেস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড় সুলতানকে বিক্রির জন্য দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ১৮ লাখ টাকা। জেলার মধ্যে বড় গরুগুলোর একটি এই সুলতান।

ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের গেরদা গ্রামের তাহেরা এগ্রো ফার্মস লিমিটেড খামারে ষাড়টিকে লালন-পালন করা হচ্ছে।

তাহেরা এগ্রো ফার্মস লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে একটি টিনের শেডে তাহেরা এগ্রো ফার্মটির যাত্রা শুরু হয়। খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন গেরদা গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ নওশের আলী ও তাহেরা নওশের দম্পতির দুই ছেলে সৈয়দ আকিব নওশের ও সৈয়দ আবরার নওশের। বর্তমানে সাড়ে চার বিঘা জমিতে সুবিশাল পাঁচটি শেডে অন্তত আড়াই শতাধিক গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি সৌখিন এই দুই খামারি ঘোড়া, দুম্বা, খাসি ও বিদেশি জাতের কুকুরও লালন-পালন করছেন।

এবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারে ১৭ থেকে ২০ মণ ওজনের ২২টি, ২৩ থেকে ২৫ মণ ওজনের তিনটিসহ বিভিন্ন ওজনের ১০০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। খামারের অন্তত ৮ জন শ্রমিক এসব গরুগুলোর যত্নের দায়িত্বে রয়েছেন।

সাড়ে চার বছর বয়সী কালো রঙের সুলতানের ওজন ৩২ মণ। উচ্চতা প্রায় ৭০ ইঞ্চি ও চওড়া ২২ ইঞ্চি। প্রতিদিন দুপুরে অন্তত তিনজন কর্মচারী তিনদিক থেকে দড়ি টানাটানি করে শেড থেকে বাইরে আনেন গোসল করানোর জন্য। আট থেকে দশ মিনিট মোটরের পাইপের পানির মাধ্যমে গোসল শেষে আবার শেডে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর খেতে দেওয়া হয় সবুজ ঘাস।

খামারের ব্যবস্থাপক আকবর হোসেন বলেন, ষাড়টির নাম রাখা হয়েছে সুলতান। তাকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ কেজি কাঁচা ঘাস, নিজেদের প্রক্রিয়াজাতকৃত গম, ভুট্টা, ছোলা ও খেসারির ডালের ভূষি দিয়ে বানানো দানাদার খাদ্য খেতে দেওয়া হয়। নিজেদের ও লিজ নিয়ে গেরদা ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অন্তত ২০০ বিঘা জমিতে ঘাস লাগানো হয়েছে। এসব ঘাস পশুদের খাওয়ানো হয়। এছাড়া অন্য কোনো বিশেষ খাবার বা ইনজেকশন পশুদের দেওয়া হয় না। যার কারণে অন্যান্য খামারের থেকে আমাদের খামারের গরুর চাহিদা বেশি। তাছাড়া মোটাতাজাকরণে কোনো ওষুধ বা স্টোরওয়েড হরমোন দেওয়া হয় না বলে এক বছরের কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুতকৃত গরু বিক্রি না হলে পরের বছর সেটি বিক্রি করে দিই।

পশুপালন, ঈদুল আজহা, ফরিদপুর২৫ লাখে বিক্রি হবে ৩২ মণের সুলতান

খামারের মালিক সৈয়দ আবরার নওশের জাগো নিউজকে বলেন, ষাড়টির দাম ২৫ লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই ক্রেতারা আসছেন, বিভিন্ন ধরনের দাম বলছেন। তবে সর্বোচ্চ ১৮ লাখ টাকা উঠেছে। জেলার মধ্যে সুলতানই সবচেয়ে বড় ষাঁড় গরু বলে তিনি দাবি করেন।

খামারের আরেক পরিচালক সৈয়দ আকিব নওশের বলেন, আমরা সারাবছর খাইয়ে একেকটা গরু কোরবানির ঈদের বাজারকে টার্গেট করে প্রস্তুত করি। দেখা যায় এসময় মিয়ানমার ও ভারত থেকে চোরাইপথে গরু আসে দেশে। এটা ঠেকাতে না পারলে দেশীয় খামারিদের টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। পাশাপাশি গোখাদ্যের দাম প্রতিনিয়ত যেভাবে বাড়ছে এর লাগাম না টানতে পারলে কর্মচারী খরচ, খামার পরিচালনসহ নানান ব্যয়ের চাপে খামার চালানো কঠিন হয়ে যাবে। এই দুইটা দিকে সরকার একটু নজর দিলে আমরা দেশীয় খামারিরাই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে মাংস রপ্তানি করতে পারবো।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সব খামারিদের সর্বোচ্চ সাহায্য সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ফরিদপুরের খামারিরা যাতে গরু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর স্টোরওয়েড হরমোন ব্যবহার না করেন সেব্যাপারে আমরা সারাবছর সচেতনতা বৃদ্ধি ও নজরদারি করেছি। পাশাপাশি বৈজ্ঞানিকভাবে গরু লালন-পালনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এ বছর ফরিদপুরে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৮টি। তবে জেলায় এর চেয়ে অনেক বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এসব পশু ফরিদপুর ও আশপাশের জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করা হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দেশে পশুর কোনো ঘাটতি নেই। গতবছর প্রায় পাঁচ লাখ গবাদি পশু অবিক্রিত ছিল। এ বছর তার সঙ্গে আরও সাড়ে চার লাখ পশু যোগ হয়েছে। আমাদের দেশে চাহিদা হলো এক কোটি ২৯ লাখ পশু, সেখানে আছে এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি।

এন কে বি নয়ন/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।