মানিকগঞ্জের মেডিকেল ইনস্টিটিউট

শিক্ষক নেই, অধ্যক্ষও আসেন সপ্তাহে একদিন

মো. সজল আলী মো. সজল আলী মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪:৪৬ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

শুধু অধ্যক্ষ দিয়েই চলছে মানিকগঞ্জে সরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল। তিনিও আসেন সপ্তাহে একদিন। দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-প্রশাসক, জনবল না থাকায় পাঠদানে ব্যাঘাত হচ্ছে। এছাড়া নেই লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরিসহ শিক্ষা সরঞ্জাম। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা হয়। যদিও আসন সংখ্যা ৩২টি। এসময় অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ওসমান গনি। শিক্ষক হিসেবে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চারজন চিকিৎসা কর্মকর্তাকে খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে নিয়োগপ্রাপ্ত এ চারজনের কেউ নেই।

বর্তমানে দুই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষাক্রম চলমান রয়েছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিও চলছে। ছাত্র-ছাত্রীদের থাকার জন্য ভেতরে পৃথক হোস্টেলের ব্যবস্থা থাকলেও কোনো নিরাপত্তাকর্মী নেই। প্রতিষ্ঠানের গেটে একজন অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মী থাকেন।

নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ডা. নুসরাত জাহান মৌরিন যোগদান করে দুই বছরের জন্য শিক্ষাছুটি কাটাচ্ছেন, ডা. সালসাবির হোসেন অরর্চি যোগদান করে চলে গেছেন বিদেশে। ডা. কাওছার হোসেন যোগদানের পরপরই বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এছাড়া ডা. রাসেল হোসেন যোগদান করেননি।

ফলে শিক্ষক-প্রশাসক হিসেবে অধ্যক্ষ ডা. মো. ওসমান গনির ওপরই ভর করে আছে প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগ রয়েছে তিনিও শুধু বৃহস্পতিবার অফিস করেন। এতে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নামমাত্র কয়েকটি বই থাকলেও লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি নেই। মেডিকেল যন্ত্রপাতি, মানব দেহের কঙ্কাল, দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সচিত্র দেখারও সুযোগ নেই এখানে।

প্রথম বর্ষের ছাত্রী মুক্তা আক্তার বলেন, আমি টাঙ্গাইল থেকে ভর্তি হয়েছি। অনেক আশা নিয়ে এসেছি যে, পড়াশোনা শেষ করে একজন ভালো মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হবো। কিন্তু এখানে এসে প্রতিটা দিন চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছি। ভবিষ্যতে কি করবো এটাই সব সময়ের চিন্তা।

jagonews24

মাশরাফি নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আন্দোলনের জন্য আমাদের ক্লাস বন্ধ রয়েছে। তবে আমাদের প্রতিদিন ৪টি ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক সংকটে হয় না। এখানে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও উৎকণ্ঠায় ভুগছি।

শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, এখানে বড় ভবন আছে, ক্লাসরুম আছে কিন্তু বসার জন্য যথাযথ আসবাবপত্র নেই। শিক্ষক ও জনবল নেই। প্রিন্সিপাল স্যার এনাটমি ক্লাস নেন, তিনি একমাত্র ভরসা। আর কোনো পার্মানেন্ট শিক্ষক নেই। কি শিখব সেটি নিয়ে হতাশায় থাকি সারাক্ষণ।

কুমিল্লা থেকে আসা শিক্ষার্থী ফয়েজ ইসলাম বলেন, এতদূর থেকে এখানে পড়াশোনা করতে এসে বিপাকে পড়ে গেছি। এভাবে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। পুরো প্রতিষ্ঠানে একজন অস্থায়ী নিরাপত্তা গার্ড। প্রায়ই বহিরাগতরা ভেতরে ঢুকে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, সরকারের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকতেই পারে। তবে এটি স্বাস্থ্যশিক্ষার বিষয়, তাই অতিদ্রুত সব সমস্যা চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ডা. মো. ওসমান গনি বলেন, এখানে কোনো বাজেট নেই। ফলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তারা আসেন নাই। তাই খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানো হচ্ছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বারবার জনবল ও বাজেট চেয়ে চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি অধিদপ্তর।

আরএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।