ব্যাংকখাত সংস্কারের উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ?

ইয়াসির আরাফাত রিপন
ইয়াসির আরাফাত রিপন ইয়াসির আরাফাত রিপন
প্রকাশিত: ০৫:৫৪ পিএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের গত ছয় মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন, ব্যাংকিং টাস্কফোর্স গঠন, ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া এসব উদ্যোগের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকখাতে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হলে দীর্ঘ সময় দরকার। ফলে এই সরকারের নেওয়া উদ্যোগ পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার আশা ক্ষীণ।

ব্যাংকখাতের অন্যতম সংস্কার

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অর্থনীতির যেসব খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় তা হলো ব্যাংকখাত। এ কারণে গণঅভ্যুত্থানের পর সংস্কারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় এই খাতটি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই ১১টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পষর্দ ভেঙে দেওয়া হয়। যার মধ্যে ১০টির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত ছিল বহুল আলোচিত চট্টগ্রামভিত্তিক আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণও নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকখাত সংস্কারে গঠন করা হয় টাস্কফোর্স। এ টাস্কফোর্স অনিয়মের শিকার ব্যাংকগুলোর সম্পদের প্রকৃত মান বের করছে। এসব ব্যাংকের ফরেনসিক নিরীক্ষা করছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে একটি পৃথক বিধিও তৈরি করা হয়। দুর্বল ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান বের করার পর এই বিধির অধীনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।

ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা

নতুন গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়ে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দেন। ডলারের দাম ১২০ টাকা নির্ধারণ করে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত কমবেশি করার সিদ্ধান্ত নেন। এতে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে ডলারের বাজার। যদিও একটি চক্র ডলারের বাজার অস্থির করতে চাইলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্রুত পদক্ষেপে তা বেশিদূর এগোয়নি। ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার পরিকল্পনা এখন। এছাড়া সরিয়ে দেওয়া হয় দুই ডেপুটি গভর্নর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শক ও বিএফআইইউ প্রধানকে। নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয় অন্যদের।

পাচার অর্থের সন্ধানে অডিট ফার্ম নিয়োগ

ব্যাংকখাত থেকে পাচার হওয়া ১৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সন্ধানে বিশ্বের বড় তিন অডিট ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব অডিট ফার্ম হলো- ইওয়াই, কেপিএমজি ও ডেলয়েট। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা এসব অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি জানান, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে চায় বাংলাদেশ। লোপাট হওয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে কেনা সম্পদের হদিস ও পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ১১টি যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং কাজ করছে।

‘অনেক সমস্যার মধ্যে একটি উচ্চ মূল্যস্ফীতি, যা এখনো চলমান। এ কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এর প্রতিফলন এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না, আরও কিছুটা সময় লাগবে হয়তো।’- বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ

দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশের মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলমান। নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। গত ৫ আগস্টের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পরই এ নিয়ে কাজ শুরু হয়। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য একাধিকবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানো হতে পারে। বিষয়টাতে ব্যবসায়ীরা মোটেই খুশি নন, কারণ তাদের অতিরিক্ত সুদ গুনতে হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি অন্য সংস্থাগুলো ঠিকঠাক মতো কাজ করা প্রয়োজন, এতে নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

ব্যাংকখাতে কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন ও লুটপাট বন্ধ

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক দখল করা হয় প্রকাশ্যে। এতে বিভিন্ন সংস্থা থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও সমর্থন ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে দেওয়ার পর তা ঋণের নামে লোপাটও করা হয়। এসব অর্থ জালিয়াতি করে পাচার করা হয় দেশের বাইরে। এ কারণে আমানতকারীদের জমানো অর্থের নিরাপত্তা কমে যায়, ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ আর ডলারের দাম আটকে রাখা হয়। এর মাধ্যমে একশ্রেণির ব্যবসায়ীকে সুবিধা দেওয়া হয়।

সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকখাতে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ শুরু হয়। আর্থিক স্থিতিশীলতা আনতে নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পষর্দ ভেঙে সেগুলোর আসল চিত্র বের করে আনা, খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা উদ্ঘাটন ও মার্কিন ডলারের সংকট মেটানো প্রাধান্য পায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগে ডলারের সংকট মিটিয়ে রিজার্ভের পতন থামানোর পাশাপাশি ব্যাংকখাতে অবাধ লুটপাট বন্ধ হয়েছে। যদিও অন্য উদ্যোগের সুফল পাওয়া নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, সুফল পেতে আরও সময় লাগবে বলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বীকারও করে।

প্রকাশ্যে খেলাপি ঋণ

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাভেদ) ইউসিবি থেকে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আইএফআইসি ব্যাংক থেকে, সিকদার পরিবার ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের অর্থ তুলে নিয়েছে নামে-বেনামে। তাদের নেওয়া এসব ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। আগের সরকার অর্থাৎ শেখ হাসিনা সরকারের গোপন করা খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই তিন মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

ব্যাংকখাত সংস্কারের উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ?

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ তো কমেছেই, তলানিতে নেমেছে ঋণ প্রবৃদ্ধি। গত নভেম্বর মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা বিগত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নামে-বেনামে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণ কমে আসায় এবং দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত ১১টি ব্যাংকের নতুন ঋণ প্রদান বন্ধ থাকায় এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ে। এজন্য ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিল, সুদ মওকুফ ও ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছভাবে করতে বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা।

পুনঃতফসিলে বিশেষ সুবিধা

খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে আবার বিশেষ সুবিধা দিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিল, সুদ মওকুফ ও ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে তবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা এ সুযোগ পাবেন না। এজন্য বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সাম্প্রতিক আন্দোলন, অগ্নিকাণ্ড, করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ প্রকৃত ক্ষতির মুখে পড়া ২০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণে বিশেষ পুনঃতফসিলে প্রস্তাব কমিটির কাছে দেওয়া হবে। বিগত সরকারের সময় ঢালাওভাবে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধাসহ বিভিন্ন নীতি ছাড়ের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হচ্ছিল। প্রভাবশালীরা কিস্তি না দিলেও খেলাপি দেখানো হচ্ছিল না। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া অনেক ঋণ এখন খেলাপি হতে শুরু করেছে। আগের মতো বিশেষ সুবিধা বন্ধ হওয়ায় খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। মাত্র ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

টাকা ফিরতে শুরু করেছে ব্যাংকে

মূল্যস্ফীতির চাপ ও ব্যাংকের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে টানা কয়েক মাস সাধারণের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ বাড়ছিল। গত বছরের শেষ দিকে মানুষের হাতে থাকা টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করে অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা রাখার পরিমাণ বাড়িয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা, নভেম্বর শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা কমেছে ১২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। আস্থার সংকট কিছুটা দূর হওয়ায় এই টাকা ব্যাংকে ফেরত এসেছে বলে জানান খাত সংশ্লিষ্টরা।

বাড়ছে ব্যাংকের আমানত

গত ৫ আগস্টের পর ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে ঋণ বের হওয়া কমেছে। এতে আমানত প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। গত নভেম্বরে ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের একই মাসের তুলনায় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা বেশি। ২০২৩ সালের নভেম্বর শেষে ব্যাংকখাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের আগস্টে আমানতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন, আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ০২ শতাংশ। পরের মাস সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরে আমানতে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। অক্টোবরে আরও কিছুটা বেড়ে প্রবৃদ্ধি হয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবর শেষে ব্যাংকখাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ দশমিক ৫৫ লাখ কোটি টাকা।
একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, অনেক বড় বড় ঋণ অনিয়মের খবরে আমানত কমেছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা পাওয়ার পর ব্যাংকগুলো কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমানতকারীদের মাঝেও আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে।

সুদ বাড়ানো হলে ব্যবসায়ীদের ওপর এর প্রভাবের বিষয়টি আছে। আবার মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। আমাদের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি কিছু সময়ের জন্য দরকার। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার দিকেও নজর দিতে হবে। কারণ একদিকে বিনিয়োগ চাই, আবার সুদ বাড়ানো হবে এতে ব্যবসায়ীদের ওপর প্রভাব কিছুটা পড়বে। -সিপিডির সম্মানীয় ফেলো এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান

বেড়েছে রেমিট্যান্সপ্রবাহ

জুলাই বিপ্লবের সময় প্রবাসী বাংলাদেশিরা আন্দোলনে একাট্টা হয়ে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরই বাড়তে থাকে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই-জানুয়ারি) সাত মাসে দেশে এক হাজার ৫৯৬ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে জুলাই মাসে আসে ১.৯১ বিলিয়ন ডলার। এরপর রেমিট্যান্স আসার গতি বাড়তে থাকে। টানা ছয় মাস দুই বিলিয়ন ডলারের ওপরে রেমিট্যান্স আসে দেশে। গত আগস্টে আসে ২.২২ বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২.৪০ বিলিয়ন, অক্টোবরে ২.৪০ বিলিয়ন, নভেম্বরে ২.১৯ বিলিয়ন, ডিসেম্বরে ২.৬৪ বিলিয়ন এবং সবশেষ জানুয়ারিতে আসে ২.১৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা মন্থরগতি থাকলেও সার্বিক ব্যাংকখাতে সংস্কারের উদ্যোগ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ব্যাংকখাত সংস্কারের উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ?

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই বাণিজ্যিক ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠনসহ অন্যান্য বিষয়ে বহু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে কিছু সুফল পাওয়া গেছে, কিছু ফলাফল আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। ব্যাংকগুলোকে ভালো অবস্থানে নিয়ে আসতে সুপরিকল্পনা আছে। আবার আমানতকারীদের আস্থা ফিরে আসবে, ব্যাংকে টাকা ফিরছে। ব্যাংকখাতে ভীতি কেটেছে গ্রাহকের, এটা বড় সাফল্য।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক বছর ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ ও সীমিত কর্মসংস্থানের চাপ রয়েছে। আগামী দিনে বিনিয়োগে চ্যালেঞ্জ থাকবে। বিশেষ করে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নীতি সুদহার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে সুদহার বাড়ানো হলে এটারও সীমাবদ্ধতা আছে। দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে এলে সেটা আবার কমাতে হবে। সরকারি গ্রোথ যেখানে ১৯, বেসরকারি গ্রোথ সেখানে ৭ শতাংশের মতো। এখানে সুদ বাড়ানো হলে ব্যবসায়ীদের ওপর এর প্রভাবের বিষয়টি আছে। আবার মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। আমাদের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি কিছু সময়ের জন্য দরকার। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার দিকেও নজর দিতে হবে। কারণ একদিকে বিনিয়োগ চাই, আবার সুদ বাড়ানো হবে এতে ব্যবসায়ীদের ওপর প্রভাব কিছুটা পড়বে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অনেক সমস্যার মধ্যে একটি উচ্চ মূল্যস্ফীতি, যা এখনো চলমান। এ কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এর প্রতিফলন এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না, আরও কিছুটা সময় লাগবে হয়তো।’

ইএআর/এসএনআর/এমএমএআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।