এত আমদানির পরও কমছে না চালের দাম

নাজমুল হুসাইন
নাজমুল হুসাইন নাজমুল হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩৩ এএম, ২৯ মার্চ ২০২৫
বাজারে এখন আমদানি করা চাল কিনতে পাওয়া যাচ্ছে/জাগো নিউজ

জুলাই থেকে চলতি ২৫ মার্চ পর্যন্ত আমদানি ৪ লাখ ২২ হাজার টন
চার দেশ থেকে আমদানি চুক্তি ৯ লাখ টন
সরকারের গুদামে মজুত ৯ লাখ ২৪ হাজার টন
চিকন চালের দাম এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ

গত কয়েক মাসে সরকারি পর্যায়ে চালের আমদানির প্রবণতা যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বেসরকারি পর্যায়েও আমদানি হয়েছে ভালো পরিমাণ চাল। ব্যবসায়ীদের আনা ভারতের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চিকন চাল এখন বাজারে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে সরবরাহ ঘাটতিও নেই। এত আমদানির পরও কমছে না দাম।

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত (২৫ মার্চ) দেশে চার লাখ ২২ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে সরকারি পর্যায়ে। চার দেশ থেকে আমদানি চুক্তি করা হয়েছে ৯ লাখ টন। এছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে যেখানে গত অর্থবছরে চাল আমদানির পরিমাণ শূন্য ছিল, সেখানে এ অর্থবছরের বিগত নয় মাসে দুই লাখ ৮৬ হাজার টন চাল এসেছে। এছাড়াও সরকারের গুদামে এখন মজুত রয়েছে ৯ লাখ ২৪ হাজার টন চাল।

এত আমদানির পরও প্রায় দেড় বছর ধরে দেশে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। শেষ ছয় মাসে প্রতি কেজি চালের দাম প্রায় দশ টাকা বেড়েছে। চিকন চালের দাম এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ। এখন মোটা চাল প্রতি কেজি ৬০ টাকা ও চিকন চাল সর্বনিম্ন ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

আমরা ৯ লাখ টন চাল আমদানি করছি। টেন্ডার করেছি ছয় লাখ টন, আড়াই লাখ টন জিটুজি এবং আরও প্রায় ৫০ হাজার টন মিলে মোট এ চাল আনা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক এসেছে। আমরা খালাস করতে হিমশিম খাচ্ছি।- খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক মনিরুজ্জামান

 

গত আগস্টে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ফসলহানির প্রেক্ষাপটে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির অনুমতি দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এসময় ১৮ লাখ টন চাল আমদানির জন্য অনুমোদন নেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছিলেন তার চেয়েও অনেক কম পরিমাণ চাল আমদানি করেছেন। সেদিক থেকে সরকারের চাল আমদানি প্রবণতা বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল।

এত আমদানির পরও কমছে না চালের দাম

আরও পড়ুন

খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ৯ লাখ টন চাল আমদানি করছি। টেন্ডার করেছি ছয় লাখ টন, আড়াই লাখ টন জিটুজি এবং আরও প্রায় ৫০ হাজার টন মিলে মোট এ চাল আনা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক এসেছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে জাহাজের জট হয়ে গেছে। আমরা খালাস করতে হিমশিম খাচ্ছি। দুই বন্দরে আটটি জাহাজের চাল খালাস কার্যক্রম চলমান।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামে চালের দাম বেশি হওয়ার কারণে অনুমতি নেওয়ার পরেও তারা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে চাল আনতে পারছেন না। তবে এখন পর্যন্ত যে চাল এসেছে তা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি।

এত আমদানির পরও কমছে না চালের দাম

দিনাজপুরের চাল আমদানিকারক আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘৩৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি থাকলেও দশ হাজার টন আমদানি করতে পেরেছি। ভারতে চালের দাম বেশি। ওই চাল এনে খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। এজন্য চাল আমদানি বন্ধ রেখেছি।’

দেশের মোকাম, আড়ত, পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে কোথাও চালের সংকট নেই। তবে উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এছাড়া বাংলামতি ৬০ টাকার চাল এখন ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের যেসব চাল আসছে তার দামও বেশি।- বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ী দ্বীন মোহাম্মদ স্বপন

তার মতো আরও কয়েকজন আমদানিকারক জানান, আমদানি করা চাল স্থানীয় বাজারে লাভজনক নয়। এ কারণে পুরো পরিমাণ চাল আমদানি করেনি তারা। তবে আমদানি যে পরিমাণে হয়েছে, সেটা বাজারে ছেড়েছেন। বিশেষ করে ভারত থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চিকন চাল এনে বাজারে ছাড়া হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরেও দেখা যায়, সেখানে ভারতীয় কয়েকটি ব্র্যান্ডের চাল রয়েছে। যেগুলো ৯০-৯৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি দোকানেই ওইসব চাল কমবেশি রয়েছে।

বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ী দ্বীন মোহাম্মদ স্বপন বলেন, ‘দেশের মোকাম, আড়ত, পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে কোথাও চালের সংকট নেই। তবে উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এছাড়া বাংলামতি ৬০ টাকার চাল এখন ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের যেসব চাল আসছে তার দামও বেশি।’

এত আমদানির পরও কমছে না চালের দাম

অনেকে বলছেন, আগামী বোরো মৌসুম পর্যন্ত চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। চালের এ বাড়তি দাম খুচরা বাজারে গত বছরের আগস্ট থেকে ঊর্ধ্বমুখী, কারণ তখন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় আমন চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ওই সময় প্রায় আট লাখ টন চাল উৎপাদন কমে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

চালের দামের চাপ কমাতে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে প্রচুর চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এ ঈদে প্রায় সাত লাখ টন চাল নানাভাবে বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি বড় অংশ রয়েছে একদম স্বল্পমূল্যে ও বিনামূল্যে।-খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান

ফলন কমে যাওয়ায় চালের দাম যেন আরও না বেড়ে যায় তা রোধ করতে সরকার মজুদ বাড়াতে ও দাম কমাতে আমদানি উৎসাহিত করে। কারণ, ঐতিহাসিকভাবে চালের দামের ওপর মূল্যস্ফীতি নির্ভর করে। বিশেষ করে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের বেশি। ফলে কম-মধ্যম আয়ের মানুষ চালের দাম বাড়ায় বাড়তি চাপে পড়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘চালের দামের চাপ কমাতে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে প্রচুর চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এ ঈদে প্রায় সাত লাখ টন চাল নানাভাবে বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি বড় অংশ রয়েছে একদম স্বল্পমূল্যে ও বিনামূল্যে।’

এনএইচ/এএসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।