জালালাবাদ গ্যাস ও লাফার্জহোলসিমের মধ্যে চুক্তি সই

জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসির মধ্যে একটি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি সই হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) ঢাকার বিদ্যুৎ ভবনে চুক্তি সই হয়। লাফার্জহোলসিমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী এবং জালালাবাদ গ্যাসের কোম্পানি সচিব জিতেন্দ্র কুমার দাস নিজ নিজ কোম্পানির পক্ষে চুক্তি সই করেন।
চুক্তি অনুযায়ী জালালাবাদ গ্যাস লাফার্জহোলসিমকে আগামী দশ বছরে দৈনিক ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস সরবরাহ করবে, যা ২০২৬ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে উভয় পক্ষকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। জ্বালানি খাতে ভর্তুকি অনেক বেশি এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন, অন্যথায় কোনো চুক্তি অনুমোদিত হবে না।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উপদেষ্টা বলেন, অন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় গ্যাসের চাপ কম হয়, এটি ছাতকে হওয়ায় গ্যাসের চাপ বেশি হবে।
তিনি জানান, আগে চুক্তির যে অসুবিধা ছিল তা এখন অপসারণ করা হয়েছে এবং এই চুক্তিতে দুটি নতুন বিষয় সংযুক্ত হয়েছে: নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বার্কের (বিইআরসি) অধীনে আনা হয়েছে, ফলে বার্কের মাধ্যমে মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি হবে।
ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের ফলে তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা জানান, এটি যুদ্ধের স্থায়িত্বের ওপর নির্ভর করবে, তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে দাম বাড়ানো হবে না।
তিনি বলেন, শর্ট টার্মের জন্য ব্যবস্থা আছে, জ্বালানি তেলের জন্য ছয় মাসের চুক্তি আছে এবং এলএনজির জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি আছে। সরকার মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও অন্যান্য উৎস থেকে তেল-গ্যাস সংগ্রহ করে, তাই যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি না হলে স্বল্প সময়ের জন্য তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কথা চিন্তা করছে না।
উপদেষ্টা উপস্থিত তিন রাষ্ট্রদূতকে চুক্তির স্বাক্ষরের বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই চুক্তি বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে আগ্রহ সৃষ্টি করবে। এই চুক্তি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বিশ্বব্যাপী এফডিআই (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এফডিআই বৃদ্ধি করতে হলে বিদ্যমান কোম্পানিগুলো থেকে বেশি পরিমাণে নতুন বিনিয়োগ আসা উচিত এবং নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করতে হবে। লাফার্জহোলসিমের সঙ্গে প্রথম বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে তিনি জানান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার লাফার্জের অবদান ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন। তিনি এই খাতে আরও বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে উৎসাহিত করেন এবং এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এই চুক্তি বাংলাদেশে শিল্পের জন্য একটি স্থিতিশীল গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। তিনি আরও যোগ করেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী।
সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো রেঙ্গলি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে লাফার্জের অবদানের প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে লাফার্জহোলসিম এই খাতে আরও বেশি অবদান রেখে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসতিয়াগা ওচোয়া দ্য চিনছেক্র বাংলাদেশে তাদের পরোক্ষ বিনিয়োগে অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি উল্লেখ করেন যে স্পেন গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে এবং বাংলাদেশ স্পেনের জন্য চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য।
লাফার্জহোলসিমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী সবার প্রচেষ্টার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান এবং জালালাবাদ গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এনএস/এমআরএম/এমএস